রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ‘সহায়তার প্রস্তাব’ জাপানের

বৈশ্বিক নানা ফোরামে মিয়ানমারের পক্ষে থাকলেও দেশটির নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতার ‘প্রস্তাব দিয়েছে’ জাপান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2017, 04:35 PM
Updated : 19 Nov 2017, 06:30 PM

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এই প্রস্তাব দেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন।

রোববার বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাতের পর আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে তারো কোনো দুই দেশের (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) মধ্যে একটি চুক্তির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।”

নির্যাতনের মুখে দেশত্যাগী ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে এই দফায় মানবিক কারণে আশ্রয় দিলেও তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমার এক্ষেত্রে গড়িমসি করছে।

জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও শেখ হাসিনা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলেন। রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারেরই নাগরিক, তাও তাকে বলেন তিনি।

সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস হলেও তাতে ভোট দানে বিরত ছিল জাপান।

এটা জাপানের বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান নয় বলে বলে দাবি করেন জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ প্রেস সচিব তোশিহিদো আনদো।

তিনি রোববার ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, এই বিষয়ে জাপানের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। তারা মনে করেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আসলে কী ঘটছে, তার একটি নতুন অনুসন্ধান দরকার। 

রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পক্ষে থাকার নজির হিসেবে মানবিক সহায়তা ৫০ কোটি ডলার থেকে ১৮৬ কোটি ডলারে উন্নীত করার কথাও বলেন তোশিহিদো।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের শরণার্থীদের অবস্থা দেখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মঘেরিনি, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল,সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ভলস্টার ও জাপানের পররাষ্ট্রন্ত্রী তারো কোনো রোববার সকালে কক্সবাজারের কুতুপালং গিয়েছিলেন।

শরণার্থী ক্যাম্পে তারা নির্যাতনের শিকার কিছু রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এছাড়া ক্যাম্পে আইওএম-এর প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র, জরুরি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পর সিগমার গাব্রিয়েল, মারগট ভলস্টার ও ফেদেরিকো মঘেরিনিও আলাদা আলাদাভাবে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

তারা সবাই রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের পাশে থাকার জোরাল সমর্থনের কথা বলেছেন বলে ইহসানুল করিম জানান।

রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সমর্থনের উপর গুরুত্বারোপ করেন সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভলস্টার। শরণার্থীদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূ চি কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শেখ হাসিনার সঙ্গে একমত পোষণ করে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাস নিশ্চিত করার কথাও বলেন বলে প্রেস সচিব জানান।

রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ফেরত পাঠানোর কথাও বলেন সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিদেশি প্রতিনিধিদের সবাই কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার মতো মানবিক আচরণের দেখানোয় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেন, মিয়ানমারের এই নাগরিকদের দীর্ঘদিন বাংলাদেশে রাখা সম্ভব নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মঘেরিনি মিয়ানমারে আসন্ন আসেম সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলেন।

কক্সবাজারের কুতুপালংয়ের শরণার্থী শিবিরের ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী,প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী,মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও পররাষ্ট্র সচিব মো.শহীদুল হক বৈঠকগুলোতে উপস্থিত ছিলেন।