দুদকের পানামা পেপার্স অনুসন্ধানই শেষ হয়নি

এখন প্যারাডাইস পেপারে বাংলাদেশিদের নাম নিয়ে আলোচনা চললেও দেড় বছর আগের পানামা পেপার্সের তদন্তই শেষ করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকও সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2017, 12:52 PM
Updated : 19 Nov 2017, 03:45 PM

সম্প্রতি প্যারাডাইস পেপার্সেও কয়েকজন বাংলাদেশির নাম আসার প্রেক্ষাপটে রোববার দুদক চেয়ারম্যানের ইকবাল মাহমুদের কাছে পানামা পেপার্সের বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।

গত বছর বহুল আলোচিত পানামা পেপার্স এ বাংলাদেশিদের নাম আসার পর তা অনুসন্ধানে ওই বছরের ৭ এপ্রিল তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করেছিল দুদক।

নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সেই জিজ্ঞাসায় ইকবাল মাহমুদ বলেন, “পানামা পেপার্স অনুসন্ধান আমরা এখনও শেষ করতে পারিনি।”

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “কারণ পানামা পেপার্সে দুটি বিষয়, একটি হচ্ছে, এটাতে কোনো দুর্নীতির বিষয় আছে কি না? দুই হচ্ছে যে, মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না? অর্থাৎ দুর্নীতির ভিত্তিতে সঞ্চিত টাকা বাইরে পাচার হয়েছে কি না?”

এক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতার বিষয়টি তুলে ধরে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “মানি লন্ডারিং আইনে আমাদের কিছু সমস্যা আছে। সব মানি লন্ডারিং আমরা দেখতে পারি না। যদিও হাই কোর্ট থেকে বলা হয়েছে, আমরা সবই দেখতে পারি।

“দুর্নীতির বিষয়টা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে নিয়ে আসলে তাতে সবই সম্ভব! সব দেখা তো আমাদের পক্ষে সম্ভবও না।”

গত বছর পানামার ল’ ফার্ম মোস্যাক ফনসেকার বিপুল সংখ্যক নথি ফাঁসের পর বিশ্বজুড়ে তোলপাড় হয়। গোপনে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত অঞ্চলগুলোতে প্রভাবশালী নানা ব্যক্তিদের অর্থ খাটানোর বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে এতে।

এরপর এই মাসের শুরুতে বারমুডার ল ফার্ম অ্যাপলবির গ্রাহকদের ১ কোটি ৩৪ লাখ নথি ফাঁস করে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে)।  

পানামা পেপার্সে দেড় ডজনের মতো বাংলাদেশির নাম আসার পর দুদক তাদের বিষয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে প্যারাডাইস পেপার্সে আরও বাংলাদেশির নাম এসেছে।

 

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “প্যারাডাইস পেপার্সের ব্যাপারটি আজকে মাত্র পেয়েছি। আমরা অনেকগুলো নাম পেয়েছি। সে নামগুলো...

“প্যারাডাইস পেপার্সের ব্যাপারে আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করব যে, আমরা এটা অনুসন্ধানে নেব কি নেব না। আমরা এটা দিয়েছি, কমিশনে উপস্থাপনের জন্য। অনুসন্ধানে নিলে আপনারা জানতে পারবেন।”

মুদ্রা পাচারের তদন্তের বিষয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশে ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (এফআইইউ), এনবিআর ও সিআইডি- এই চারটি সংস্থা মুদ্রা পাচারের বিষয়গুলো দেখে থাকে।

“আমরা পানামা পেপার্সের ব্যাপারে অনেকগুলো এমএলআর  করেছি, যার উত্তর এখনও আসেনি। যে কারণে আমরা নিশ্চিত হতে পারছি না যে টাকাগুলো তারা কীভাবে নিল। আবার অনেকে উত্তর দিচ্ছে যে, উনি ওই দেশের নাগরিক। এসব নিয়ে আমরা বিচার-বিশ্লেষণ করছি।

“আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসব যে, পানামা পেপার্সে আসলে কী হয়েছিল? কী রকম মানি লন্ডারিং হয়েছিল? কোন সংস্থা এটা তদন্ত করবে। আমরা তাদের কাছে পাঠিয়ে দেব?”

“তবে আমরা এটা নিশ্চিত করব, আমরা যাব না। হয় আমরা করব, নয় অন্য কেউ করবে,” বলেন ইকবাল মাহমুদ।

অর্থমন্ত্রীর ব্যাখ্যা দাবি

প্যারাডাইস পেপার্সে বাংলাদেশের যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে, তাদের টাকার হিসাব এবং এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর ব্যাখ্যা দাবি করেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী।

রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “এর আগে পানামা পেপার্সে অনেকের নাম এসেছিল। বিষয়টি তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও তা হয়নি।

“এবার ২১ জনের নাম এসেছে। আব্দুল আউয়াল মিন্টু, তার স্ত্রী সন্তানসহ অনেকের নাম এসেছে। তারা বারমুডায় বিনিয়োগ করেছেন কেন? কারণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে হলে কর দিতে হয়। তাদের উদ্দেশ্য কর ফাঁকি দেওয়া।”

এই সংক্রান্ত আরও খবর