স্বপ্নের মধ্যেও যেন কবিতা লিখি: বেন ওকরি

উপন্যাসের জন্য পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি এলেও নাইজেরিয়ান বংশোদ্ভূত লেখক বেন ওকরি কবিতা অন্তঃপ্রাণ; তার ভাষায় যেন ‘স্বপ্নের মধ্যেও’ কবিতা লেখেন তিনি।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2017, 02:00 PM
Updated : 18 Nov 2017, 02:08 PM

কবিতাকে সত্য ভাষণ বলে মানেন এই লেখক: “আমার কাছে কবিতার মানে হল সত্য, কবিতাকে সত্যিটাই বলতে হবে আজীবন।”

লিট ফেস্টে যোগ দিতে ঢাকায় আসা বেন ওকরি শনিবার একটি সেশনে বক্তব্য দেওয়ার পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় লেখালেখি নিয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন।

প্রতিদিনই কবিতা লেখেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এমনকি আমি যখন ঘুমাই, তখন স্বপ্নের মধ্যেও যেন আমি কবিতা লিখি। তবে আমি কখনো খুব তাড়াহুড়ো করতে চাই না। একেকটা কবিতা শেষ করতে আমি বেশ খানিকটা সময় নিই।”

ষাটের দশকে নাইজেরিয়ায় গৃহযুদ্ধের ক্ষত প্রত্যক্ষের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা বেন ওকরি বলেন, “আমার কাছে কবিতার মানে হল সত্য, কবিতাকে সত্যিটাই বলতে হবে আজীবন। একেকটা কবিতা লেখার আগে আমি বারবার ভাবি, যা লিখছি তা কতটা সত্য।

“পংক্তিগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতেই থাকে। কিন্তু নিজের উত্তেজনা দমন করে আমি সেই পংক্তিগুলো একের পর এক সাজাতে থাকি। এভাবেই নির্মিত হয় আমার কবিতা।”

বেন ওকরির জন্ম ১৯৫৯ সালে নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে। তার বয়স যখন দুই বছরেরও কম তখন পরিবার নিয়ে লন্ডন পাড়ি জমান ওকরির বাবা। আবার তার নাইজেরিয়ায় ফিরে আসেন ১৯৬৮ সালে।

বেন ওকরির লেখালেখির শুরু কিশোর বয়সে, প্রথমে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখে তার প্রকাশক পাননি। পরে ওই সব প্রবন্ধের বক্তব্য নিয়ে ছোট গল্প লেখেন। প্রথম দিকের লেখাগুলোতে সরকারের সমালোচনার কারণে একটি ‘ডেথ লিস্টে’ তার নাম উঠেছিল বলে জানান বেন ওকরি।

১৯৭৮ সালে ফের লন্ডন যান নাইজেরিয়া সরকারের অনুদান নিয়ে এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য পড়তে। ওই বৃত্তি শেষ হলে লন্ডনে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েন ওকরি; কখনও বন্ধুর বাসা আবার কখনও পার্কে শুয়ে-বসে কাটতে থাকে তার সময়।

ওই সময়কে নিজের লেখালেখির জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ওকরি।

“ওই সময়ে আমি শুধু লিখেছি আর লিখেছি…।”

এখনও কাগজে-কলমেই নিজের লেখা সম্পাদনা করেন জানিয়ে বেন ওকরি বলেন, “আমি এটাতেই ভীষণ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। নিজের লেখা সম্পাদনার জন্য এর চেয়ে সেরা পন্থা আমার আর কিছুই মনে হয় না।”

ম্যানবুকার পুরস্কারবিজয়ী লেখক বেন ওকরি ছোটবেলায় হতে চেয়েছিলেন চিত্রশিল্পী। পরে কবি হলেও চিত্রকর্মের প্রতি আগ্রহ হারাননি। কাব্য- সাহিত্য চর্চার বাইরে সুযোগ পেলেই তিনি ছুটে যান চিত্রকর্ম খুঁজতে।এমনকি চিত্রকলার নানা উপাদানকে উপজীব্য করে কবিতাও লিখেছেন তিনি।

তার প্রথম উপন্যাস ‘ফ্লাওয়ার্স অ্যান্ড শ্যাডোস’ প্রকাশ পায় ১৯৮০ সালে, পরের বছর প্রকাশিত হয় ‘ল্যান্ডস্কেপ উইদিন’। ১৯৯১ সালে ওকরি বুকার পুরস্কার পান তার ‘দ্য ফেমিশড রোড’ উপন্যাসের জন্য।

তার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘ইনসিডেন্টস অ্যাট দ্য শ্রাইন’, ‘স্টারস অব দ্য নিউ কারফিউ’, ‘অ্যাসটোনিশিং দ্য গডস’, ‘ডেঞ্জারাস লাভ’, ‘ইন আর্কেডিয়া’, ‘স্টারবুক’, ‘অ্যান আফ্রিকা এলিজি’, ‘মেন্টাল ফ্লাইট’, ‘এ ওয়ে অব বিং ফ্রি’ ইত্যাদি।

তার অধিকাংশ গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় উঠে আসে নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের কথা। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা।

বাংলাদেশে এসে ‘ভীষণ ভালো লাগছে’ জানিয়ে বেন ওকরি বলেন, “বাংলাদেশের সাহিত্য, কবিতা নিয়ে অনেক কথা শুনেছি। এবার আমি বাংলা সাহিত্য পড়তে শুরু করব।”