মঙ্গলবার রাতে সিদ্দিকের প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস মুন্সী ওভারসিজে হামলার পর ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে এবং ওই সময় সেখানে থাকা কয়েকজনের কাছ থেকে মুখোশধারী চার হামলাকারীর কথা জানা গেছে।
এই ঘটনায় সিদ্দিকের স্ত্রী জোৎস্না বেগম বুধবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে মামলা করেছেন বলে বানানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বনানী ৪ নম্বর সড়কে ১১৩ নম্বর বাড়ির নীচতলায় সিদ্দিকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দেয় দুর্বৃত্তরা।
ঘটনার পর বানানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিন জানিয়েছিলেন, দুর্বৃত্তরা সেখানে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে সিদ্দিকসহ চারজন আহত হন।
আহতদের গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে সিদ্দিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঘটনার তদন্তের বিষয়ে বুধবার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মতিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
“ফুটেজে চারজন মুখোশধারীকে ওই প্রতিষ্ঠানে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করতে দেখা গেছে। যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে ফুটেজে তাদের ছবি স্পষ্ট দেখা গেছে। তাছাড়া তাদের সম্পর্কে তথ্যও পাওয়া গেছে। আশা করছি খুব শিগগিরই একটা ফল পাওয়া যাবে।”
হত্যাকাণ্ডটিকে ‘পরিকল্পিত’ বলছেন গুলশান বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ।
এদিকে বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়সহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।
পরে কৃষ্ণপদ রায় বলেন, “এই হত্যার ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে তদন্ত কাজ এগোচ্ছে।”
বিকালে সিদ্দিকের মরদেহের ময়না তদ্ন্ত হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, “একটি গুলি সিদ্দিকের বুকের বামদিক দিয়ে ঢুকে ডান অংশে আটকে ছিল। আরেকটি গুলি তার হাত ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে উপস্থিত ছিলেন সিদ্দিকের ভাই আব্দুল লতিফ এবং হোসাইন আহমেদ ও জাফর নামে সিদ্দিকের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মচারী। হামলার সময় হোসাইন ও জাফর সেখানেই ছিলেন।
হামলার বর্ণনা দিয়ে জাফর বলেন, “চারজন মুখোশধারী ঢুকেই ক্যাশ কোথায় জানতে চায়। আমাদের মধ্যে কেউ একজন বলল, টাকা ব্যাংকে জমা থাকে।
“এ কথা শুনে দুর্বৃত্তরা বকাবকি শুরু করে এবং একটি গুলি করে, কিন্তু (পিস্তল বা রিভলবার থেকে) গুলি বের হয় নাই। পরে আবার তারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে চলে যায়।”
সিদ্দিক হোসেনকে যখন গুলি করা হয় তার আগে সেই কক্ষে পেয়ারা এবং এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢুকেছিলেন পিয়ন আলী হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“স্যারকে খাবার দিয়ে বের হওয়ার মুহূর্তে একজন মুখোশ পরা যুবক ঢুকে আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে এবং আমার সামনে স্যারকে গুলি করে।
“আমি শুধু গুলির শব্দ শুনেছি, আর কিছু মনে নেই। পরে দেখি স্যার চেয়ারের নীচে পড়ে আছেন, কিন্তু যুবকটি নেই। স্যারকে ধরাধরি করে বাইরে বের করার চেষ্টা করে দেখি দরজা বন্ধ।”
ঘটনার সময় বাইরে ছিলেন নিরাপত্তাকর্মী আলাবিনুজ বাজি। তিনি জানান, সাধারণ মানুষ যেভাবে আসা-যাওয়া করে হত্যাকারীরা সেভাবেই ঢুকেছিল।
“ভেতরে কি হয়েছে বুঝিনি, গুলির শব্দও পাইনি। কিন্তু একসময় ভেতর থেকে দরজা ধাক্কাধাক্কির শব্দ শুনে গিয়ে দেখি বাইরে থেকে লাগানো। খুলে দিতেই দেখি রক্তাক্ত স্যারকে ধরাধরি করে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। দরজা খেলার সাথে সাথে তারা স্যারকে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়।”
সিদ্দিক হোসেনের বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানার স্বামী আবু হানিফ শ্বশুরের প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগে কাজ করেন। তবে আবু হানিফ ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন না।
শ্বশুরের সাথে কারো বিরোধ আছে এমন কোনো তথ্য তার জানা নেই বলে জানান আবু হানিফ।
নিহত সিদ্দিক টাঙ্গাইল কালিহাতীর পাড়ক্ষি মধ্যপাড়ার আনছার আলীর ছেলে। স্ত্রী, দুই মেয়ে সাবরিনা সুলতানা, সাবিহা সিদ্দিক ও ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়ে উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় থাকতেন তিনি।