ভোটের আগেই আইন শৃঙ্খলার বরাদ্দ ছাড়ের উদ্যোগ

নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বরাদ্দের টাকা ভোটের আগেই দ্রুত ছাড় করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2017, 06:07 AM
Updated : 15 Nov 2017, 06:57 AM

জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত মাসের শেষ দিকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অর্থ বরাদ্দ সংক্রান্ত কমিশন সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, ভোটের খরচের বেশিরভাগটাই আইন শৃঙ্খলা রক্ষা খাতে ব্যয় হয়। কিন্তু  অনেক ক্ষেত্রে অর্থ বরাদ্দে বিলম্ব  এবং বদলির কারণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের  টাকা পেতে বেগ পেতে হয়।

বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রের  নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যরা ভোটের আগে বরাদ্দের অর্থ না পেলে কারও কারও ‘প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা’ রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্টরা মত দেন সভায়।

ওই বৈঠকের বিষয়ে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচন, উপ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপালনকারী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনের পরে অর্থ বরাদ্দ পান। ওই অর্থ ছাড় করার প্রক্রিয়া কীভাবে গতিশীল করা যায় তার পথ খোঁজার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব সভায় বলেন, ভোটে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আনসার সদস্যই বেশি থাকেন। তাদের অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

আনসার ও ভিডিপি পরিচালক (অপারেশন্স) সভায় বলেন, ভোটকেন্দ্রে আনসার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা এবং ভাতা নির্ধারিত থাকে। কিন্তু মোতয়নের আদেশ জারির পর সময় কম থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই ভোটের আগে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায় না।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অর্থ) বলেন, পুলিশের অনুকূলে নির্বাচনী ব্যয় বাবদ অর্থ বরাদ্দের অনেক উন্নতি হয়েছে। ভোটের আগে বা পরে যখনই অর্থ ছাড় করা হোক, দায়িত্ব পালনকারী প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে তাদের প্রাপ্য পরিশোধ করা হয়।

তবে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের  দায়িত্বপালনকারী আনসার সদস্যরা ভোটের আগে বরাদ্দ পান না জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “এতে করে তারা কোনো কোনো সময় স্থানীয় ব্যক্তিদের দেওয়া খাবার খেয়ে থাকেন। ফলে তাদের প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ থেকে যায়।”

বিজিবি সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স) সভায় জানান, এ বাহিনীর সদস্যরা ভোটের আগে-পরে চারদিন দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু নির্বাচনের পরে অর্থ ছাড় করা হলে বকেয়া টাকা সদস্যদের পরিশোধ করতে বেগ পেতে হয়।

তাদের নিজের দপ্তরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে আসা-যাওয়াসহ ছয় দিনের অর্থ বরাদ্দের অনুরোধ জানান তিনি।

র‌্যাবের উপ পরিচালক (অপারেশন্স) বলেন, প্রতি জেলায় র‌্যাবের কার্যালয় না থাকায় বিজিবির মত তাদেরও দূরের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

আবার সাত বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র‌্যাব গঠিত বলে ভোটের পরে অর্থ বরাদ্দ করা হলেও সদস্যদের বদলি বা নিজের বাহিনীতে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বকেয়া পরিশোধ কঠিন হয়ে যায়।

ফাইল ছবি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক-১) বলেন, ইসির অনুমোদনের পর জননিরাপত্তা বিভাগ পরিপত্র জারি করে। ফলে পরিপত্রটি অনেক সময় নির্বাচনের ৫-৭ দিন আগে জারি করা যায়।

তফসিল ঘোষণার পরপরই আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকটি করা যায় কিনা- তা ভেবে দেখার কথা বলেন তিনি। 

সভার কার্যবিবরণীতে দেখা যায়,  নিরাপত্তা সদস্যদের অর্থপ্রাপ্তি সুচারু করতে ইসি সচিবালয় ৫টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিদ্ধান্তগুলো হল- পরিপত্র আরও আগে জারি করা; বাহিনীর সদস্যদের প্রাপ্য ভাতা নির্বাচনের আগেই অগ্রিম দেওয়া; সরাসরি অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ইসি সচিবালয়ে পাঠানো ও অনুলিপি জননিরাপত্তা বিভাগে দেওয়া; মোতায়েনের চাহিদাপত্র জনবিভাগে পাঠানো এবং বাহিনীর সদরদপ্তরে পাঠানো নিশ্চিত করা এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া।

কার্যবিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৬ জন নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। আর র‌্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা ছিলেন টহলে।

ওই নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়, এর আগে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা।

দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকায় ভোটের সময় সশস্ত্র বাহিনীর অর্ধ লক্ষ সদস্যের সঙ্গে ছিলেন অন্তত  ৮০ হাজার পুলিশ, আট  হাজার র‌্যাব, ১৬ হাজার বিজিবি ও প্রায় সোয়া ২ লাখ আনসার সদস্য।

নির্বাচন আয়োজনে ব্যয় হয় প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৮৩ কোটি টাকাই আইন শৃঙ্খলা খাতে যায়।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো ৩০০ আসনে ভোট করতে হলে খরচও সে অনুযায়ী দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

বর্তমান ইসির অধীনে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ এর ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।