রাজধানীতে পড়ুয়াদের নতুন ঠিকানা ‘বেঙ্গল বই’ ঘর

বইপড়ুয়া নাগরিকদের জন্য রাজধানীর ধানমণ্ডিতে যাত্রা শুরু করল ‘বেঙ্গল বই’, যেখানে দেশি-বিদেশি বই বিকিকিনির সাথে পড়ুয়াদের জন্য ভিন্ন আমেজ আর আড্ডার ব্যবস্থাও থাকছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2017, 03:35 PM
Updated : 14 Nov 2017, 03:47 PM

মঙ্গলবার বিকালে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্থাপিত ‘বেঙ্গল বই’র সূচনা অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ছিলেন ইংরেজির অধ্যাপক নিয়াজ জামান ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু।

উদ্বোধনী আয়োজনে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আখ্যান ‘স্টোরিজ ফ্রম দ্য এজ: পার্সোনাল নেরেটিভস অব দ্য লিবারেশন ওয়ার’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। পরে এ বইটি নিয়ে আলোকপাতও করেন তারা।

অনুষ্ঠানের গওহর রিজভী বলেন,“ঢাকা শহরে খুব বেশি বই বিতণী নেই, যেখানে গিয়ে বই পড়া আর আড্ডা দেওয়া যাবে। এখানে এসে সত্যি অসাধারণ লাগছে। এমন আয়োজনকে সত্যি অভিনন্দন জানাতে হয়। ”

পরে ‘স্টোরিজ ফ্রম দ্য এজ: পার্সোনাল নেরেটিভস অব দ্য লিবারেশন ওয়ার’বইটি নিয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত বইটি তরুণ প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধকে এক নতুন মাত্রায় উপস্থাপন করবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তুলে ধরতে আমাদের এমন আরো উদ্যোগ প্রয়োজন।”

এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “তরুণ প্রজন্ম এখন আধুনিক প্রযুক্তির কী সব খেলা নিয়ে ব্যস্ত। ওদের সাথে কথা বলতে গেলে ওদের চোখ থাকে মোবাইলে। এদের বইয়ের জগতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। বলা হচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে ছাপার বই হারিয়ে যাবে। কিন্তু দেখুন, প্রতি বছর বইমেলায় প্রকাশিত বই, প্রকাশকের সংখ্যা কিন্তু বাড়ছে, বাড়ছে বিক্রি। এ দেশে ছাপার বইয়ের আবেদন রয়েছে। এখন আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বইমুখো করতে হবে।”

‘স্টোরিজ ফ্রম দ্য এজ: পার্সোনাল নেরেটিভস অব দ্য লিবারেশন ওয়ার’ বইটি নিয়ে অধ্যাপক নিয়াজ জামান বলেন, “পাঠ্যপুস্তক থেকে ছেলেমেয়েরা আর কতটা জানবে মুক্তিযুদ্ধকে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি, তাদের নানা অভিজ্ঞতা যদি আমার লিখতে থাকি, তবে এই প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরো বেশি করে জানানো যাবে।”

পরে ‘বেঙ্গল বই বিতণী’ নিয়ে আবুল খায়ের লিটু বলেন, “সংস্কৃতি চর্চার নানামুখী কর্মপ্রবাহের মধ্য দিয়ে দেশজ সংস্কৃতি চর্চার নানামুখী কর্মপ্রবাহের মধ্য দিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন জনরুচি, জীবন ও মননে মাত্রা সঞ্চারে প্রয়াসী। এই কর্মপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় রুচিশীল পাঠক তৈরির লক্ষ্যে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির মিলন-আবহে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেঙ্গল বই।”

বেঙ্গল বইয়ের তিন তলা ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলাজুড়ে আছে দেশি-বিদেশি বই। নিচতলায় সব শ্রেণির পাঠকের জন্য আছে পুরনো বই ও ম্যাগাজিন। দোতলার বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে গল্প করা যাবে। অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী হুইলচেয়ারে পুরো জায়গা ঘুরে নিজের পছন্দমাফিক বই কিনতে পারবেন।

বাংলাদেশের ২৫টি ও ভারতে ১৫টি প্রকাশনার বই পাওয়া যাবে এখানে। গল্প, উপন্যাস থেকে শুরু করে মিলবে শিল্পকলা, সাহিত্য, স্থাপত্যবিষয়ক বইও। বাংলাদেশের প্রকাশিত যে কোনো বই ২০ শতাংশ ছাড়ে কিনতে পারবেন। তবে ভারতীয় বইয়ের ক্ষেত্রে বইয়ের মূল্যের দ্বিগুণ পরিশোধ করতে হবে।

বিতণীর পরিবেশকে মনোরম করে তুলতে  দেওয়াজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন শিল্পী চিত্রকর্ম। আছে শিল্পী ওয়াকিলুর রহমানের একটি ভাস্কর্য। সময়ে সময়ে দেয়ালজুড়ে থাকবে চিত্র প্রদর্শনীর আওতায় নানা শিল্পকর্ম। একটু সবুজও দেখা মিলবে ভবনের ফাঁক গলে। প্রবীণদের জন্য রয়েছে বইয়ে বিশেষ ছাড় এবং বাগানে বসে আড্ডা দেওয়ার পরিবেশ।

ভবনের তিনতলার প্রায় পুরোটাই শিশুদের জন্য। ‘আকাশকুসুম’ নামে সেই রাজ্যে শিশুবান্ধব পরিবেশে বইপড়া ছাড়াও গল্পবলা, আবৃত্তি, ছবি দেখা ও আঁকাআঁকির মধ্য দিয়ে শিশুদের কল্পনার জগৎ লালিত হবে।

বইয়ের পাশাপাশি আছে লেখাপড়ায় সহায়ক নানা আকর্ষণীয় সামগ্রী।  বেঙ্গল বই-এ নিয়মিত পাঠচক্র, কবিতা পাঠের আসর, নতুন লেখা ও লেখকের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা, প্রকাশনা উৎসব, চিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন থাকছে। ছুটির দিনগুলোয় প্রিয়জনদের নিয়ে বাগানে বসে চলতে পারে আড্ডা।

বেঙ্গল বই এর যাত্রা শুরু উপলক্ষে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা গান, আড্ডা, গল্প, বই প্রকাশনা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে মুখর থাকবে লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ১/৩ ঠিকানায় ‘বেঙ্গল বই’ প্রাঙ্গন।