মুফতি হান্নানের গ্রেপ্তারের খবরে ‘বিরক্ত’ হন বাবর

২০০৫ সালে জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নানকে গ্রেপ্তারের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ‘বিরক্ত হয়েছিলেন’ এবং তাকে নিয়ে একুশে অগাস্টের হামলার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ‘নিষেধ করেছিলেন’।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2017, 03:31 PM
Updated : 14 Nov 2017, 03:31 PM

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় র‌্যাবের সাবেক এক প্রধানের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক শুনানিতে এই দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান।

শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টার আলোচিত মামলাটির বিচারে শেষ পর্যায়ে এখন যুক্তিতর্ক শুনানি চলছে। গত ২৩ অগাস্ট থেকে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করছে। তাদের শেষ হলে আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের পর হবে রায়ের তারিখ।

পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ এজলাসে শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে মামলাটির বিচার চলছে। বুধবারও শুনানি চলবে।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মঙ্গলবার দশম দিনের যুক্তিতর্ক শুনানিতে সাতজন সাক্ষী এবং একজন আসামির জবানবন্দি আদালতে উপস্থাপন করেন।

সাক্ষীরা হলেন মোসাদ্দেক বিল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল গোলাম রাব্বানী, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক আব্দুল আজিজ সরকার, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সৈয়দ মনিরুল ইসলাম, মো. তারেক আজম, মো. সাদেক হোসেন ও মো. মকবুল হোসেন এবং আসামি আবু জান্দাল।

সাবেক র‌্যাবপ্রধান আজিজ সরকারের জবানবন্দি উদ্ধৃত করে সৈয়দ রেজাউর বলেন, “মুফতি হান্নানের গ্রেপ্তারের খবরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলেন। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নিতেও নিষেধ করেছিলেন।”

২১ অগাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে (ফাইল ছবি)

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ওই হামলার পর তদন্ত ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে পরে তদন্তে উঠে আসে।

শুরুর দিকের তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা, ওই সময়কালের তিন পুলিশ প্রধানের সঙ্গে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী বাবরও পরে মামলার আসামি হন।আসামি করা হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকেও।

সাবেক র‌্যাব প্রধান আজিজ সরকার ২০১১ সালের ৮ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দেন। বিএনপি আমলে তিনি দায়িত্ব পালনের সময়ই ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানকে ঢাকার মেরুল বাড্ডা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান (ফাইল ছবি)

আদালতে জবানবন্দিতে আজিজ সরকার বলেন, “তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎকালীন আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে অবহিত করি। বাবর সাহেব মুফতি হান্নানের গ্রেপ্তারের খবরে সন্তুষ্ঠ হন নাই বরং কিছুটা বিরক্ত হন। তবে কোনো মন্তব্য করেন নাই।”

টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে ২১ অগাস্টের হামলায় জড়িত থাকার কথা মুফতি হান্নান স্বীকার করেন জানিয়ে আজিজ সরকার বলেন, “তাও তৎকালীন অতিরিক্ত আইজিপি ও বাবর সাহেবকে অবহিত করি এবং এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ জানাই। কিন্তু এর অনুকূলে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায় নাই। বরং বাবর সাহেব ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নিতেও নিষেধ করেন।”

গ্রেনেড হামলাস্থল

এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উদ্ধৃত করে সৈয়দ রেজাউর বলেন, মুফতি হান্নানের বাড্ডার বাড়ি থেকে ওলামা লীগ পরিচয়ে সেদিন গ্রেনেড নিয়ে আওয়ামী লীগের মিছিলে ঢুকে পড়েছিল হামলাকারীরা।

মামলার আসামি মুফতি হান্নান অন্য মামলায় ইতোমধ্যে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। মামলার আরেক আসামি তৎকালীন মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদও যুদ্ধাপরাধে ঝুলেছেন ফাঁসিতে। ফাঁসিতে ঝুলেছেন আরেক আসামিও।

মামলার ৫২ আসামির মধ্যে বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের বড় ছেলে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় এই গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন, আহত হন কয়েকশ।