রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, নারীদের ধর্ষণ, গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া কিংবা লুটপাটের কোনো ঘটনায় সেনা সদস্যরা জড়িত নয় বলে দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
অগাস্টের শেষ দিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরু হওয়ার পর সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।
সেনাবাহিনী কীভাবে নির্বিচারে মানুষ মারছে, ধর্ষণ, লুটপাট করছে, সেই বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কথায়।
ওই অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা করে আসছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। আর বিবিসি লিখেছে, তাদের প্রতিবেদক রাখাইন সফরে নিজে চোখে যা দেখেছেন, তার সঙ্গে বর্মি সেনাদের তদন্ত প্রতিবেদন সাংঘর্ষিক।
মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সেনাবাহিনীর ওই প্রতিবেদনকে বর্ণনা করেছে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে।
মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে রাখাইনের ওই অঞ্চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। সেখানে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করারও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
নিয়ন্ত্রিত ওই সফরেও বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়তে দেখার কথা পরে এক প্রতিবেদনে জানান বিবিসির ওই সংবাদিক।
তিনি সেখানে লিখেছেন, মিয়ানমারের পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় বৌদ্ধদের তিনি রোহিঙ্গা গ্রামে আগুন দিতে দেখেছেন।
সর্বস্ব হারিয়ে গায়ে গুলির ক্ষত নিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছানো রাহিঙ্গারাও গ্রামে গ্রামে হামলা, হত্যা, অগ্নিসংযোগের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাখাইনের বৌদ্ধদের দেখার কথা বলেছেন।
কিন্তু সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে ফেইসবুকে তারা যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, কয়েক হাজার গ্রামবাসীর সাক্ষাৎকার নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সেনা সদস্যদের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-
# সেনাবাহিনী কোনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেনি।
# কোনো নারীকে ধর্ষণ করা হয়নি, যৌন নিপীড়নের কোনো ঘটনাও সেনাবাহিনী ঘটায়নি।
# গ্রামবাসীদের গ্রেপ্তার করে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি।
# বাড়িঘরে লুটপাট চালিয়ে সোনা-রুপার গয়না, গবাদি পশু বা যানবাহন নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।
# সেনাবাহিনী কোনো মসজিদে আগুন দেয়নি।
# কাউকে গ্রাম ছাড়তে বলা হয়নি, সেনা সদস্যরা কাউকে হুমকিও দেয়নি।
# বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার সঙ্গেও সেনাবাহিনী জড়িত নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরাই বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং তাদের হুমকিতেই হাজার হাজার মানুষ গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।
গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে যে হামলার পর সেনাবাহিনীর এই অভিযান শুরু হয়, তার পেছনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একটি দলকে দায়ী করে আসছে মিয়ানমার সরকার।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ওই প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এটাই প্রমাণ করেছে যে, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
“মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো যাতে বিচার এড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই দায়িত্ব নিতে হবে।”