‘হাওয়া ভবনের আশ্বাসের পর ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা’

বিএনপি নেতৃত্বধীন জোট সরকার আমলে ‘হাওয়া ভবন’ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়ার পর জঙ্গিরা ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল বলে দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2017, 05:13 PM
Updated : 22 Jan 2018, 11:38 AM

শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার আলোচিত এই মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে সোমবার মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানের জবানবন্দির বরাত দিয়ে এই দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান।

পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন সড়কে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ এজলাসে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে মামলাটির বিচার চলছে। এদিন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ না হওয়ায় পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন বিচারক।

শুনানিতে রেজাউর রহমান বলেন, “বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু জঙ্গি নেতাদের প্রশাসনিক ও আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।”

মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সমর্থন করে ১২ সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তারা জবানবন্দিতে বলেছেন, জঙ্গি তৎপরতা চালাতে আওয়ামী লীগকে তাদের বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন।

“তারা উপমন্ত্রী আব্দুস সালামের সরকারি বাসভবন ও হওয়া ভবনে বসে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে হাওয়া ভবন ছিল তার রাজনৈতিক কার্যালয়ের মতো। তার ছেলে তারেক রহমান নিয়ন্ত্রিত হাওয়া ভবন সরকার পরিচালনার ‘দ্বিতীয় কেন্দ্র’ হয়ে উঠেছিল এবং তখন হাওয়া ভবনের ‘ইশারা ছাড়া’ কোনো কাজ হত না বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ।

শুনানিতে মামলার সাক্ষী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সাদেক হাসান রুমি এবং আসামি মাজেদ ভাটের সাবেক স্ত্রী লায়লা কাকনের দেওয়া সাক্ষ্য পড়ে শোনান রেজাউর রহমান।

১৩ বছর আগের এই মামলাটিতে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এখন যুক্তিতর্ক শুনানি চলছে। রাষ্ট্রপক্ষের পর আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে রায় হবে।

হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান এই মামলার অন্যতম প্রধান আসামি। তবে অন্য মামলায় এই বছরই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলটির তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ জন আহত হন।

সন্ত্রাসবিরোধী ওই সমাবেশের প্রধান অতিথি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ামাত্র গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ শুরু হয়। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্ত হয়। এতে আসামির তালিকায় যোগ হন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ ৩০ জন।

৫২ জন আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান এবং জামায়াত নেতা ও তৎকালীন মন্ত্রী আলী আহসান মো. মুজাহিদের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

বাকি ৫০ আসামির মধ্যে সাবেক পুলিশ প্রধানরাসহ আটজন জামিনে রয়েছেন। পলাতক আছেন তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ আসামি। কারাগারে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ বাকিরা।   

হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা মামলা দুটির বিচার একসঙ্গে চলছে।

রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরার পর কারাবন্দি ২৩ এবং জামিনে থাকা আট আসামির আত্মপক্ষ সমর্থন ও সাফাই সাক্ষ্য শেষে গত ২৩ অক্টোবর শুরু হয় যুক্তি তর্ক শুনানি।