বিচারপতি জয়নুলকে নিয়ে রুলের রায় মঙ্গলবার

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ‘আটকাতে’ দুর্নীতি দমন কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলে যে রুল দিয়েছিল, তার রায় মঙ্গলবার দেবে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2017, 06:43 AM
Updated : 13 Nov 2017, 09:43 AM

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাই কোর্ট বেঞ্চের সোমবার প্রকাশিত মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় মামলাটিকে রায়ের জন্য রাখা দেখা যায়।

এই আদালতে দায়িত্বরত সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত ৩১ অক্টোবর রুলের শুনানি শেষ হলে তা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। সে রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় এসেছে রিট মামলাটি।”

বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের ব্যবস্থা নেয়া সমীচীন হবে না উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন চিঠি দিয়েছিল। এই ধরনের চিঠি কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ৯ অক্টোবর রুল জারি করে হাই কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টর আইনজীবী মো. বদিউজ্জামান তফাদার সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রর্তীর স্বাক্ষরিত দুদককে দেওয়া গত ২৮ মার্চের চিঠিটি নজরে আনলে এ রুল দেয় আদালত।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার, দুদকের চেয়ারম্যান ও বিচারপতি জয়নুল আবেদীনকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ষোড়শ সংশোধন অবৈধ

রুল শুনানির জন্য অ্যামিচি কিউরি হিসেবে আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, এ এম আমিন উদ্দিন ও প্রবীর নিয়োগীকে নিয়োগ দেয়।

এরপর ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু হয় শুনানি, যা শেষ হয় ৩১ অক্টোবর।

বিচারপতি এস সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকার সময় এই চিঠিটি দেওয়া হয়েছিল। ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে পদত্যাগী বিচারপতি সিনহা এই চিঠি নিয়েও সমালোচনায় পড়েছিলেন।

এই আবেদনের শুনানিতে আদালত জানতে চেয়েছিল- সুপ্রিম কোর্টের এই চিঠির বিচার করার এখতিয়ার হাই কোর্টের আছে কি না?

জবাবে প্রবীর নিয়োগী বলেছিলেন, “এটা প্রধান বিচারপতির প্রশাসনিক আদেশ। সুতরাং কোনো প্রশাসনিক আদেশের বিচার করার এখতিয়ার হাই কোর্টের রয়েছে।”

মামলার পূর্বাপর

জয়নুল আবেদীন ১৯৯১ সালে হাই কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ২০০৯ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসরে যান তিনি।

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সন্দেহে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে তাকে নোটিস দেয় দুদক।

দুদকের দেওয়া ওই নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি জয়নুল আবেদীন ২০১০ সালের ২৫ জুলাই হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন।

তার শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দিয়েছিল।

এর সাত বছর পর পুনরায় এই বিচারপতির বিরুদ্ধে বিদেশে ‘অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে’ উল্লেখ করে তার বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে এই বছরের ২ মার্চ চিঠি দেয় দুদক।

এর জবাবে ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের তৎকালীন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, “সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হবে না বলে সুপ্রিম কোর্ট মনে করে।”

কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া তার প্রাথমিক তদন্ত বা অনুসন্ধান না করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের ওই চিঠিতে।

এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের প্রসঙ্গটিও আসে।

প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ওই চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে বিচারপতি এস কে সিনহা ‘ন্যায় বিচারের প্রতিবন্ধকতা’ তৈরি করেছেন।

রিট আবেদনের শুনানিতে উঠে আসে, চিঠি চালাচালির পর সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে তথ্য দুদককে দিয়েছে।

বিচারপতি জয়নুল আবেদীন এর মধ্যেই গ্রেপ্তারের আশঙ্কা প্রকাশ করে হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন।