পদত্যাগপত্র আনতে সিঙ্গাপুরে যায় সরকারি এজেন্সি: জয়নুল আবেদীন

প্রধান বিচারপতির পদত্যাগপত্র আনতে সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2017, 02:36 PM
Updated : 11 Nov 2017, 02:44 PM

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের পুলিশ বা বিশেষ কোনো এজেন্সি নেই, তাই তাকে পদত্যাগের জন্য জোর করার প্রশ্ন ওঠে না বলে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পর একথা বললেন তিনি।

শনিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতির কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জয়নুল আবেদীন বলেন, “আমরা শুনেছি, সরকারের কোনো এজেন্সি সিঙ্গাপুরে অবস্থান করেছে পদত্যাগপত্র আনার জন্য। আমরা জানি না, প্রধান বিচারপতি সিনহা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, নাকি তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আইনমন্ত্রী বলেছেন, ই-মেইলে পাঠানো পদত্যাগপত্র গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা এখনও জানি না তিনি কীভাবে পদত্যাগ করলেন, ই-মেইলের মাধ্যমে করলেন না অন্য কোনো এজেন্সি সিঙ্গাপুরে অবস্থান করে তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নিয়ে এসেছেন।

“এ রকম ঘটনা জাতির ইতিহাসে ঘটেনি। সেজন্য বিচার বিভাগের আজকের দিনটি কালো দিন। একজন প্রধান বিচারপতিকে একটি রায়ের কারণে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে বিদায় নিতে হলো এবং জোর করে তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেওয়া হল।”

গত অগাস্টে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন প্রধান বিচারপতি সিনহা। তাকে অপসারণের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন মন্ত্রী-নেতারা।

এক মাসের অবকাশ শেষে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট খোলার আগের দিন সরকারের পক্ষ থেকে অসুস্থতার কারণে প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার কথা জানানো হয়। সপ্তাহখানেক পরে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে বিচারপতি সিনহা বলেন, অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় ‘বিব্রত’ তিনি।

এরপর ছুটি শেষে তার পদত্যাগপত্র পাঠানোর খবর এলো, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, “এই অবস্থা বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা কোনোদিন দেখিনি। শুধু একটি ঘটনা দেখেছিলাম, ১৯৮২ সালে এরশাদ সরকারের সময় প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসে জানতে পারলেন তাকে অপসারণ করা হয়েছে। তারপর তিনি বারে এসে বলেছিলেন, এই হামলা এই যে পদত্যাগ করানো হলো এটা শুধু বিচারপতির উপরে নয়, এটা আইনের শাসনের উপর হামলা।”

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, “আমরা মনে করি স্ব-ইচ্ছায় এ পদত্যাগপত্র আসেনি। তারপরেও আমরা আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম সেটি গ্রহণ করা হয়েছে। যদিও গ্রহণ বা বর্জনের কথা আমাদের সংবিধানে নেই। তারপরেও শুনালম পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। তাহলে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য অবস্থায় আছে।

“বাংলাদেশর প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য থাকতে পারে না। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতি তার বিবেক দিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পরেই আমরা বুঝতে পারব ভবিষ্যতে আইনের শাসনের কী ভবিষ্যৎ। তবে গত কয়েকদিনে যে ঘটনা ঘটল তা আইনের শাসনের উপর কালোথাবা বলেই আমরা মনে করি।”

সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট উম্মে কুলসুম রেখাসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।