রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের একটি বিচারাঙ্গনের প্রধান এস কে সিনহার পদত্যাগের খবর শনিবার দুপুরে বঙ্গভবন থেকে নিশ্চিত করার পর সবার মনে প্রশ্ন ঘুরছে, এখন কী হবে?
গত অক্টোবরে বিচারপতি সিনহা ছুটিতে যাওয়ার পর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার দেন রাষ্ট্রপ্রধান মো. আবদুল হামিদ।
এখন কি তিনিই দায়িত্বভার পালন করে যাবেন, না কি নতুন করে দায়িত্বভার দেওয়া হবে- সাংবাদিকদের সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হককেও।
পদত্যাগের খবর যখন চাউর, তখন দুপুরে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “আমার মনে হয় আপনারা সবাই সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে অবগত আছেন।
“যেহেতু মাননীয় প্রধান বিচারপতির ছুটি গতকাল (শুক্রবার) শেষ হয়ে গেছে, আজকে থেকে তিনি অনুপস্থিত। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতি যিনি অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।”
তখন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব থেকে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের খবর আইনমন্ত্রী স্বীকার করেননি।
তার কিছুক্ষণের মধ্যে বঙ্গভবন পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা জানালে পরে আইনমন্ত্রী তার বাড়িতে সাংবাদিকদের সে খবর নিশ্চিত করেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিলের পর ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে গত ৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। তারপর সেখান থেকে পাঠান পদত্যাগপত্র।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলমও এখন সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে যা আছে
“প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমত অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।”
এই অনুচ্ছেদ তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা (প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার) কিন্তু নিয়োগ দেওয়া আছে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধান বিচারিপতি নিয়োগ হলে তো শপথ নিতেই হবে। ভারপ্রাপ্ত যিনি আছেন বা যিনি আসবেন, তাকে শপথ নিতে হবে না।”
অ্যাটর্নি জেনারেলের কথায় স্পষ্ট, যতদিন নতুন প্রধান বিচারপতি শপথ না নেবেন, ততদিন পর্যন্ত আবদুল ওয়াহহাব মিঞার দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই।
“আমাদের সংবিধানে এটা নাই যে, প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করলে কত দিনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে।’
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়া বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ ছিল আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। তার আগেই এল তার পদত্যাগপত্র।
বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সর্বোচ্চ আদালত জানায়, ওই সব অভিযোগের ‘গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা’ তিনি না দিতে পারায় সহকর্মীরা তার সঙ্গে এজলাসে বসতে নারাজ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলে আসছিলেন, সহকর্মীরা বসতে না চাওয়ায় এস কে সিনহার প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ফেরা ‘সুদূর পরাহত’।