আ. লীগকে নিয়ে বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন ইনু

মিত্ররা পাশে না থাকলে আওয়ামী লীগ হাজার বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না বলে মন্তব্যের পরদিন এর ব্যাখ্যা দিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, মহাজোটের শরিক দলগুলোকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের প্রেক্ষাপটে ঐক্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2017, 01:28 PM
Updated : 9 Nov 2017, 04:32 PM

জঙ্গি দমনের পাশাপাশি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে হাজার বছরের ঐক্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

নিজের জেলা কুষ্টিয়ার মিরপুরে বুধবার এক জনসভায় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ইনু বলেন, তারা সংখ্যায় বিপুল না হলেও তাদের ছাড়া ‘হাজার বছরেও’ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না।

“আপনারা ৮০ পয়সা থাকতে পারেন। আপনি এক টাকার মালিক না। যতক্ষণ এক টাকা হবেন না ততক্ষণ ক্ষমতা পাবেন না। আপনি ৮০ পয়সা আর এরশাদ, দিলীপ বড়ুয়া, মেনন আর ইনু মিললে তবেই এক টাকা হবে। আমরা যদি না থাকি তাহলে ৮০ পয়সা নিয়ে আপনারা (আ. লীগ) রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরবেন।”

তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাসদ যদি আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচনে যায়, তার ফল কী হবে- তা ইনু নিজেও জানেন।

এরপর দুপুরে সচিবালয়ে নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যা নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি, জঙ্গি দমন করার জন্য যে রকম ঐক্য দরকার, জঙ্গি দমনমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশকে স্থায়ী করতে, উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিতে প্রয়োজনে এই স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির হাজার বছরের ঐক্য যদি করতে হয় তবে হাজার বছরের ঐক্য করা দরকার।”

শেখ হাসিনা শরিক দলগুলোর অতীত ইতিহাস জেনে-শুনে, বুঝে-শুনে ঐক্য গড়ে তুলেছেন মন্তব্য করে জাসদ সভাপতি বলেন, “শেখ হাসিনা ৯৯ পয়সা অথবা ৮০ পয়সার মালিক হয়েও ২০ পয়সা অথবা এক পয়সার মালিক সমতুল্য শরিকদের উনি কদর করেছেন, দাম দিয়েছেন এবং ঐক্যে শামিল করেছেন। মহাজোট গঠন করে রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন।

“কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় শেখ হাসিনার এই দূরদৃষ্টি ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের পরেও কতিপয় নেতানেত্রী তারা ঐক্যকে খাটো করে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে থাকেন। ঐক্যের শরিকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন এবং তাদের প্রতি তির্যক মন্তব্য করেন। আমি মনে করি এটা ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং জঙ্গিবাদবিরোধী সংগ্রামকে দুর্বল করে।”

ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো আচরণ কারও করা উচিত না মন্তব্য করে হাসানুল হক ইনু বলেন, “মাঝেমধ্যে খেয়াল করেছি, ঐক্যের শরিকদের সম্পর্কে কেউ কেউ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, কটাক্ষ করে থাকে, অবহেলা করে থাকে, উদাসীনতা প্রদর্শন করে থাকে- এটা সঠিক কাজ না, এটা ঐক্যের জন্য মঙ্গলজনক না। ঐক্যের ভেতর প্রত্যেকের পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকা দরকার। ঐক্যটা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই চিন্তা থেকেই এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছি।”

ইনু বলেন, “বিএনপি, রাজাকার, জঙ্গি, তেঁতুল হুজুরবিরোধী যে ঐক্য শেখ হাসিনা গড়ে ‍তুলেছেন সে ঐক্যকে চোখের মনির মতো আগলে রাখতে হবে। বাংলাদেশে জঙ্গি দমন করা যে রকম কঠিন কাজ, জঙ্গিমুক্ত নিরাপদ বাংলাদেশকে স্থায়ী করার কাজটা আরও কঠিন।”

বিএনপি, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি চক্র এখনও চক্রান্ত করে চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখনও বাংলাদেশের বিপদ কাটেনি, এখনও বাংলাদেশ বিপদমুক্ত না। এই অবস্থায় আমরা মনে করি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে ঐক্যটা গড়ে উঠেছে তা রক্ষা করা দরকার।

“যেহেতু আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি, জঙ্গি দমনের যুদ্ধটা এখনও শেষ হয়নি, আগামী নির্বাচনটা সামনে রয়েছে, বিএনপি, জঙ্গি ও রাজাকার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, এখনও খালেদা জিয়া চক্রান্ত ছাড়েনি, এখনও খালেদা জিয়া জামায়াত জঙ্গিদের ত্যাগ করেনি। সেহেতু এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমি ঐক্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে এই সতর্কবাণীটা উচ্চারণ করেছি।”

ঐক্যে কোনো ফাটল ধরেছে কি না- এই প্রশ্নে ইনু বলেন, “ঐক্যে ফাটল ধরার প্রশ্ন উঠে না। কারণ ঐক্যের মূল কাণ্ডারি হচ্ছেন শেখ হাসিনা, উনি আন্তরিক এবং উনার নেতৃত্বেই এই ঐক্যটা হয়েছে। মাঝেমধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়, আমি মনে করি এই ভুল বোঝাবুঝি যত কমানো যায় ততই মঙ্গলজনক।”

আগামীতে জাসদ এককভাবে নির্বাচন করবে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “শরিকদের ভেতরে জাসদই একমাত্র দল যারা মনে করি জঙ্গি দমনের যুদ্ধটা শেষ করতে হলে প্রয়োজনে হাজার বছরের ঐক্য রক্ষা করা উচিত।

“যেহেতু বিএনপি-জামায়াত চক্র এখনও একাট্টা হয়ে আছে এবং খালেদা জিয়া জামায়াত চক্রকে ত্যাগ করেননি, জঙ্গিরা এখনও হামলা চালাচ্ছে সেখানে আমরা মনে করি আগামী নির্বাচনটা দেশ রক্ষার জন্য মহাজোটের নেতৃত্বেই হওয়া বাঞ্ছনীয়।”

মহাজোটের ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ ‘রক্তাক্ত আফগানিস্তান’ হয়ে যাবে মন্তব্য করে জাসদ সভাপতি বলেন, “বাংলাদেশকে রক্তাক্ত আফগানিস্তান হতে দিতে পারি না বলেই চোখের মনির মতো প্রয়োজনে হাজার বছরের ঐক্য বজায় রাখা দরকার।”