শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার আলোচিত এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান মঙ্গলবার যুক্তিতর্ক শুনানিতে একথা বলেন।
নাজিম উদ্দিন রোডে ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ এজলাসে এদিন সকাল ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত অভিযোগ প্রমাণে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন সৈয়দ রেজাউর।
এরপর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বুধবার পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করেন।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ গত ২৩, ২৪, ২৫, ৩০, ৩১ অক্টোবর ও গত ৬ নভেম্বর যুক্তি উপস্থাপন করে।
সৈয়দ রেজাউর বলেন, “ওই নৃশংস হামলায় জড়িত থাকার দোষ স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ১২ জন আসামি ১৩টি জবানবন্দি দেন। আসামিদের মধ্যে জঙ্গি মুফতি হান্নানের জবানবন্দি দুটি।
“ওই জবানবন্দিগুলো অকাট্য ও প্রত্যক্ষ, যা আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আসামিপক্ষ জেরা করেও ওই জবানবন্দি খণ্ডাতে পারেনি।”
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ওই গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। এতে জড়িত ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে বিরোধী সব মহল।
হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় কার্যকর হয়েছে। ৫২ আসামির মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয়েছে যুদ্ধাপরাধের মামলায়। আরেক জঙ্গি শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয়েছে অন্য মামলায়।
আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন রয়েছেন কারাগারে।
সাবেক পুলিশ প্রধান আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, মামলার প্রথম দিককার তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসপি রুহুল আমিন, এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট ৮ জন জামিনে রয়েছেন।
শুনানিতে সৈয়দ রেজাউর বলেন, এ মামলার সাক্ষীদের মধ্যে ১১জন সাক্ষী ওই ভয়াবহ ঘটনা বিষয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতেও তারা ওই জবানবন্দির সমর্থনে সাক্ষ্যও দিয়ে গেছেন।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষী করা হয়। এর মধ্যে প্রথম অভিযোগপত্রে ৪০৮ জন, সম্পূরক অভিযোগপত্রে ৮৩ জন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে আরও ২০ জনকে সাক্ষী করা হয়।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেকসহ ১৮ জন আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ শুনানির সুযোগ পাননি।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে আহত হন কয়েকশ।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে এই হামলার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা পরে তদন্তে উঠে আসে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর বিচার শুরু হয়। পরে অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যোগ হন তারেকসহ ৩০ জন।