তিনি বলেছেন, “বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি পদে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ফেরা সুদূর পরাহত।”
রোববার সুপ্রিম কোর্টে নিজের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
প্রধান বিচারপতি ১৩ অক্টোবর ছুটিতে বিদেশ যাওয়ার পরদিনও এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একই মন্তব্য করেছিলেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা পুঙ্খানুপঙ্খভাবে রায়টা পড়ছি। চার জন বিচারপতির দৃষ্টিভঙ্গিই কিন্তু আলাদা আলাদা। তবে মূল জায়গায় তারা একমত হয়েছেন। ফলে সমগ্র রায়টার বিরুদ্ধেই আমাদের রিভিউ করতে হবে।”
প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ফেরার সঙ্গে রিভিউ আবেদনের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা- এমন প্রশ্নে মাহবুবে আলম বলেন, “উনি কী করবেন আমিতো জানি না। প্রধান বিচারপতি সিনহা ফিরবেন কি ফিরবেন না, এর সাথে অমাদের রিভিউ দায়েরের কোনো সম্পর্ক নেই। ছুটি বাড়াবেন কিনা, ফিরলেও কবে ফিরবেন তা আমরা জানি না।”
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমি প্রথম দিন (১৪ অক্টোবর) একটি কথা বলেছিলাম, প্রধান বিচারপতি হিসেবে উনার দায়িত্ব পালন করা সুদূর পরাহত। আজকেও বলছি। কারণ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা যদি উনার সঙ্গে বসতে না চান তাহলে একা একা উনি কীভাবে বিচার করবেন? তাই প্রধান বিচারপতি হিসেবে এজলাসে বসা এবং বিচার করা সুদূর পরাহত।”
সুপ্রিম কোর্ট গত ১ অগাস্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে, যা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।
সাত বিচারপতির ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেওয়া ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।
ওই রায় এবং পর্যবেক্ষণ নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে ‘খাটো করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা।
তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে প্রধান বিচারপতি গত ৩ অক্টোবর থেকে ছুটিতে যান। তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দেওয়া হয়।
প্রধান বিচারপতিকে ‘জোর করে’ ছুটিতে পাঠানো হয়েছে- বিএনপির এমন অভিযোগের মধ্যেই ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন বিচারপতি সিনহা।
যাওয়ার আগে তিনি বলে যান, তিনি ‘অসুস্থ নন’, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় ‘বিব্রত’। তার বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল রায় নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী তার ওপর ‘অভিমান’ করেছেন।
তিনি দেশ ছাড়ার পরদিনই সুপ্রিম কোর্টের বিরল এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারপতির সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, অর্থ পাচার ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
সহকর্মীরা এর ব্যাখ্যা চাইলে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা বিচারপতি সিনহা দিতে পারেননি। এ কারণে তারা অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত একই বেঞ্চে বসতে রাজি নন বলে জানানো হয় বিবৃতিতে।
এপর ১৮ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তার অনুসন্ধান হবে এবং তা দুদকের মাধ্যমে করা হতে পারে।