প্রায় এক মাস ধরে নিখোঁজ অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিম বিডি ডটনিউজের সিনিয়র রিপোর্টার উৎপলের সন্ধান টাঙ্গাইলে মেলার খবর রোববার সন্ধ্যায় চাউর হয় বিভিন্ন টেলিভিশনে। খবরটি আসে তার পত্রিকা পূর্বপশ্চিম বিডি ডটনিউজেও।
এসব খবরে বলা হয়, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের একটি হাসপাতালে রয়েছেন উৎপল।
সন্ধ্যা ৬টায় পূর্বপশ্চিম বিডি ডটনিউজের সম্পাদক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মতিঝিল থানা মারফত জানতে পেরেছি, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের একটি হাসপাতালে উৎপল চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খবর পেয়ে আমি তার পরিবারকেও জানিয়েছি।”
তিনি বলেন, “উৎপলের ছোট বোন বিনীতা রাণী দাস পুলিশকে জানিয়েছে, উৎপলের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।”
তখন উৎপলের বাবা চিত্তরঞ্জন দাসকে ফোন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এখন রাস্তায়, একটি খবর শুনেছি, আমি বাসায় যাচ্ছি।”
কিছুক্ষণ পর ফোন করা হলে উৎপলের ভাই তা ধরে বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি যে তাকে পাওয়া গেছে, তবে আমাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি।”
এদিকে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মির্জাপুর ফাঁড়ি থেকে তথ্য পেয়েছি, এমন একজনকে পাওয়া গেছে। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা সেই তথ্য সত্য ধরে নিলেও সেখানে অফিসার পাঠানো হচ্ছে। তার স্বজনরা তাকে শনাক্ত করবেন।”
মির্জাপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খবর শুনে আমরা খোঁজাখুজি করছি। কিন্তু কয়েকটি হাসপাতাল দেখার পরও তার সন্ধান পাইনি। আরও কয়েকটি হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে, সেগুলোতে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
এর কিছুক্ষণ পর উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যে মেসেজটি পেয়েছিলাম, সম্ভবত তা ফেইক (ভুয়া)। তাকে খুঁজে পাওয়া গেলে আপনাদের জানাব।”
এরপর উৎপল দাসকে পাওয়ার খবরটি পূর্বপশ্চিম বিডি ডটনিউজ ওয়েবসাইট থেকে তুলে নেওয়া হয়। টেলিভিশনগুলোও জানায়, খবরটি ছিল ভুয়া।
পূর্বপশ্চিম বিডি ডটনিউজের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মতিঝিল থানার যে উপ পরিদর্শক উৎপলের ঘটনা তদন্ত করছেন, তিনি ফোন করে আমাদের সম্পাদককে বলেছিলেন, উৎপলকে মীর্জাপুরে পাওয়া গেছে, সেখানে হাসপাতালে আছে। আপনারা লোক পাঠান। এরপরই আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছিলাম।”
উৎপল নিখোঁজের তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, সন্ধ্যার পরপরই একটি অপরিচিত নম্বর থেকে তার মোবাইল ফোনে একটি মেসেজ আসে যে ‘উৎপল মির্জাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন’।
“সঙ্গে সঙ্গেই খবরটি পূর্বপশ্চিম বিডি ডটনিউজ সম্পাদককে জানাই। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে মির্জাপুর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে নিশ্চিত হওয়া যায় খবরটি ভুয়া।”
পূর্বপশ্চিমবিডি ডটনিউজের সিনিয়র রিপোর্টার উৎপল গত ১০ অক্টোবর মতিঝিলের অফিস থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ।
উৎপল ঢাকার ফকিরাপুল এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরার রাধানগরে।
ছেলেকে ফিরে পেতে ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাসের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস।
উৎপলের সন্ধান দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে সাংবাদিক সংগঠনগুলোও।