দীপন হত্যার বিচার নিয়ে হতাশ পরিবার

প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল দফায় দফায় পেছানোয় হতাশা প্রকাশ করেছে তার পরিবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2017, 05:13 PM
Updated : 11 June 2018, 03:56 PM

দীপনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে বুকশপ ক্যাফে দীপনপুরে স্মরণসভার আযোজন করে দীপন স্মৃতি সংসদ।

সেখানে দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি বলেন, “হত্যার দুই বছরে দীপনের জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি।তার হত্যার বিচার হয়নি। এখন আর সেসব নিয়ে ভাবি না।”

এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন গত ২৪ অক্টোবর আদালতে দাখিল করার কথা থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে তা পিছিয়ে ২১ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে আদালত। এ নিয়ে ২২ বার মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়েছে।

তিনি বলেন, “দীপনের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে যেতে চাই। দীপনের হত্যা কেন হয়েছিল সেই অন্ধকার পরিবেশ কাটিয়ে আগামী প্রজন্ম যেন মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে যেতে পারে তার জন্য কাজ করে যেতে চাই।”

অনুষ্ঠানে দীপনকে স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন লেখক-অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান নাদিম কাদির, দীপনের বন্ধু ডা. কাজী শাহেদুল আলম, মর্তুজা শরিফুল ইসলামসহ অনেকে। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল বারকাত।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “বাংলাদেশ এক জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতির জটিল কারণে হঠাৎ করেই দীপনের পরিবার পুরোপুরি একেবারে একা হয়ে গিয়েছিল। দীপনের স্ত্রী জলি সব দুঃখকে দূরে রেখে দীপনকে বাঁচিয়ে রেখেছে, সন্তানদের মানুষ করছে। মন খারাপ করা কথা বলতে আমার ভালো লাগে না। আমি শুধু বলি, মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।”

শাহবাগ চত্বর থেকে কাঁটাবন মোড় পর্যন্ত সড়কের নাম ‘দীপন রোড’ করার দাবি জানান বক্তারা। সেই সঙ্গে ৩১ অক্টোবরকে ‘প্রকাশক দিবস’ হিসাবে ঘোষণারও দাবি জানানো হয় স্মরণ সভা থেকে।

২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর বিকালে ঢাকার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে ফয়সল আরেফিন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

সেদিনই লালমাটিয়ায় আরেক প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়।

ওই দুই প্রকাশনা থেকেই বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশিত হয়, যিনি ওই বছরই একইভাবে খুন হন।

একই দিনে দুই প্রকাশকের ওপর হামলার পেছনে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমকে সন্দেহ পুলিশের। এর আগে অভিজিৎ রায়সহ ব্লগার হত্যার তদন্তেও ওই জঙ্গি সংগঠনটির নাম উঠে আসে।

দীপন হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় তার স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমানের করা মামলায় সংগঠনটির তিন সদস্য গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এরা হলেন- মাঈনুল হাসান শামীম, আব্দুস সামাদ ওরফে আব্দুস সবুর ও খায়রুল ইসলাম।

হত্যার ঘটনায় শামীম ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সবুরকেও কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।