ফ্লাইওভার জাতীয় সম্পদ, ব্যবহারে যত্নবান হোন: প্রধানমন্ত্রী

দীর্ঘ ছয় বছরের বিপুল কর্মযজ্ঞ শেষ রাজধানীর মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2017, 06:48 AM
Updated : 26 Oct 2017, 02:16 PM

আট দশমিক ৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ ফ্লাইওভারের সাত রাস্তা, বাংলামোটর ও হলি ফ্যামিলি অংশের ওঠানামার পথ আগেই খুলে দেওয়া হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে মৌচাক, রাজারবাগ, শান্তিনগর ও মালিবাগ অংশের বাকি সব পথও খুলে দেওয়া হয়।

বেলা সাড়ে ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং সৌদি আরব দূতাবাসের ইসলামী বিভাগের প্রধান সাদ আল খাতানি।

আর পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মো. ওসমান গণি, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন মৌচাক এলাকায় বানানো অনুষ্ঠান মঞ্চে।

ফ্লাইওভারের মৌচাক থেকে মগবাজার হয়ে ইস্কাটন, শান্তিনগর থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, মালিবাগ-মৌচাক হয়ে রামপুরা পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন ঘোষণার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সকলের প্রতি অনুরোধ, ব্যবহারে যত্নবান হবেন। ট্রাফিক রুল মেনে চলবেন। জাতীয় সম্পদ মনে রেখে সেটা ব্যবহার করবেন।”

ঢাকায় ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক হিসাবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এই ফ্লাইওভার যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে, কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে।”

সরকারের ‘ধারাবাহিকতা থাকলে’ উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৮ সালের পর ২০১৪ সালে জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় বসানোর কারণেই উন্নয়নের কাজ ‘সফলভাবে’ শেষ করা সম্ভব হয়েছে।

“২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে,” বলেন শেখ হাসিনা।

গণভবনের অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দৈনিক ৫০ হাজার যানবাহন এই ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে পারবে। নিচের সড়ক আগের মতোই ব্যবহার করা যাবে। ফলে যানজট থেকে নগরবাসী মুক্ত হবে।

মৌচাকে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারও ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন; প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নগরবাসীকে ফ্লাইওভার ‘উপহার দেওয়ায়’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রিয় নেত্রী মানুষের চোখেই স্বপ্ন দেখেন। এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেই এই শহরের মানুষের হাতে তাদের স্বপ্নের ফ্লাইওভার তুলে দিয়েছেন। এজন্য ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন, ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।”

২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১১ সালে মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হলেও কয়েক ধাপে তা বেড়ে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ ৬৯ লাখ টাকায় পৌঁছায়।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, এ প্রকল্পের প্রতি মিটারে খরচ হয়েছে ১৩ লাখ টাকা, যা অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় ‘অনেক কম’।

ঢাকার কেন্দ্রভাগে অন্যতম ব্যস্ত এবং চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চার লেনের এ ফ্লাইওভারে ওঠা-নামার জন্য তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, সোনারগাঁও হোটেল, মগবাজার, রমনা (হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তা), বাংলামোটর, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও শান্তিনগর মোড়ে লুপ বা  র‌্যাম্প রাখা হয়েছে।

ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ হয়েছে তিন ভাগে। একটি অংশে রয়েছে সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি পর্যন্ত, আরেকটি অংশে শান্তিনগর-মালিবাগ-রাজারবাগ পর্যন্ত এবং শেষ অংশটি বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক পর্যন্ত।

এর মধ্যে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত অংশটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এ ফ্লাইওভারের ইস্কাটন-মৌচাক অংশের যান চলাচল উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

আর ফ্লাইওভার থেকে সোনারগাঁও হোটেলের দিকে নামার র‌্যাম্পটি গতবছর ১৭ মে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানার যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান ‘সিমপ্লেক্স নাভানা জেভি’ এবং চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য নাম্বার ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি (এমসিসিসি) ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এর নির্মাণ কাজ করে।

আরও পড়ুন