মিয়ানমারকে নভেম্বরের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিশন গঠনের তাগাদা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিশন গঠনে মিয়ানমারকে তাগাদা দিয়েছে বাংলাদেশ।

কামাল তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2017, 02:04 PM
Updated : 24 Oct 2017, 02:38 PM

মিয়ানমার সফররত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে মঙ্গলবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এই তাগাদা দেওয়া হয়।

মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই বৈঠক হয়।

বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলোচনায় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের কথা ওঠে। আমরা বলেছি, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে হবে।”

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির বিশেষ দূত ও তার দপ্তর বিষয়ক মন্ত্রী উ কিয়া তিন্ত সোয়ে গত ১ অক্টোবর ঢাকায় এসেছিলেন।

তার ওই সফরে দুই দেশের কর্মকর্তাদের আলোচনায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিশন গঠনের বিষয়ে মতৈক্য হয়।

মঙ্গলবারের এই বৈঠকে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিও সই ও উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অং সোয়ে ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন বলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানান।

আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, “তারা বলেছে, রোহিঙ্গারা বাঙালি। আমি বলেছি, সারা পৃথিবীতে ৩৫ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। বাংলাদেশের নাগরিক মাত্র ১৬ কোটির সামান্য বেশি। বাংলায় কথা বললেই কেউ বাংলাদেশি নয়।

“তাছাড়া রোহিঙ্গারা বাংলায় কথা বলে না। তারা তাদের ভাষাতে কথা বলে।”

মন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গাদের ইতিহাসসহ সব কিছু আমরা তাদের কাছে তুলে ধরেছি। আমরা তাদের বলেছি, কফি আনান কমিশনের সুপারিশ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তারা আমাদের বক্তব্য শুনেছেন।”

ওই বৈঠক নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘শিগগিরই’ বাংলাদেশ থেকে নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

এই সংকটের সমাধানে তারা কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে বলেও এতে বলা হয়েছে।

এছাড়া প্রতিবছর একবার দুই দেশের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর প্রধানদের সভা এবং প্রতি তিন মাস অন্তর আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে নিয়মিত বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশের আহ্বানের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সে দেশ থেকে বাংলাদেশে মাদক পাচার বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

বৈঠক শেষে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নিরাপত্তা সহযোগিতা ও সংলাপ এবং সীমান্ত সহযোগিতা অফিস স্থাপন নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী, আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল এ এম এম আওরঙ্গজেব চৌধুরী মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সফিউর রহমান ছিলেন।

বুধবার সকাল ১০টায় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সঙ্গে বৈঠক করবেন  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।