ফুরফুরে সিইসি আওড়ালেন ‘মানসসুন্দরী’

বিগত নির্বাচন কমিশনগুলোর সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে শেষ হল বর্তমান কমিশনের তিন মাসের সংলাপ; শেষ দিনে সিইসি কে এম নূরুল হুদার ফুরফুরে মেজাজের প্রকাশ ঘটল রবীন্দ্রচর্চায়।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2017, 02:02 PM
Updated : 17 Nov 2017, 03:30 AM

নিজের স্বস্তির কথা জানিয়ে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে নূরুল হুদা তার পূর্বসূরিদের বলেন, “গত প্রায় তিন মাস ধরে অনেক মূল্যবান কথা শুনেছি, অনেক ভারী ভারী কথা শুনেছি। আজ আপনাদের পেয়ে অনেকটা হালকা অনুভব করছি।”

বিগত নির্বাচন কমিশনগুলোর জীবিত ১৭ সদস্যের পাশাপাশি সাবেক সচিব মিলিয়ে মোট ২৬ জনকে ‘নির্বাচন বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে এই আলোচনায় ডেকেছিল নূরুল হুদার ইসি। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এসেছিলেন ১৬ জন।

সাবেক সিইসিদের মধ্যে বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ ও এ টি এম শামসুল হুদা এসেছিলেন। মোহাম্মদ আবু হেনা ও কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ অনুপস্থিত থাকলেও তাদের কমিশনের সদস্য ও সাবেক সচিবরা এসেছিলেন।

সাবেক কমিশনারদের মধ্যে ছিলেন মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, এম সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও মো. শাহনেওয়াজ।

আর সাবেক সচিবদের মধ্যে আবদুল করিম, মনজুর হোসেন, হুমায়ুন কবীরসহ স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও পুলিশের কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংলাপে অংশ নেন।

২০০৬-০৭ সালের বিতর্কিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজ কমিশনকেও এ সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে এম এ আজিজ আসেননি। 

পুরনোদের কাছে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে গিয়ে সিইসি নূরুল হুদা ভাষা খুঁজে নেন  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনারতরী কাব্যগ্রন্থের ‘মানসসুন্দরী’ থেকে।

“আজ কোনো কাজ নয়-সব ফেলে দিয়ে/ ছন্দ বন্ধ গ্রন্থ গীত-এসো তুমি প্রিয়ে,/ আজন্ম-সাধন-ধন-সুন্দরী আমার/কবিতা, কল্পনালতা।”

অবশ্য সাবেক আমলা নূরুল হুদার কাব্যোচ্ছ্বাস এখানেই থেমেছে, মানসসুন্দরী কবিতার বেশি গভীরে যায়নি। 

আগামী বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দেড় বছরের একটি কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার পর সংসদীয় আসন সীমানা পুনর্বিন্যাস, আইন সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয় নির্বাচন কমিশন।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে দিয়ে গত ৩১ জুলাই ইসির এবারের সংলাপ শুরু হয়। এরপর ১৬ ও ১৭ অগাস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি।

নবম ও দশম সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিগত দুই কমিশনের সংলাপের অভিজ্ঞতা ‘সুখকর’ না হওয়ায় কে এম নূরুল হুদার কমিশন খানিকটা ‘চিন্তায়’ ছিল। ২৪ অগাস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাদের সেই চিন্তা দূর হয়।

এরপর ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনেকটা নির্ভার হয়েই নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও নারী নেত্রীদের সঙ্গে মত বিনিময় শেষ করে রোববার নূরুল হুদার কমিশন সাবেকদের সঙ্গে বসে।

তাদের স্বাগত জানিয়ে সিইসি তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, “ফেলে আসা পুরনো দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকানোর সুযোগ হল। এ সুযোগে আপনাদের স্বাগত, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিজের চাকরি জীবনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ধারাবাহিক সংলাপের আজ শেষ দিন। সুদীর্ঘকালের সুশৃঙ্খল চাকরি জীবনের চমৎকার সব অর্জন থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অংশটুকু আমাদের বলুন।

“আজ বিচিত্র অভিজ্ঞতার গল্প শুনতে চাই। গল্প পরামর্শ আকারে গ্রহণ করব। যত্ন সহকারে তা সংরক্ষণ করব, তা প্রয়োগ করব।”

‘আত্মবিশ্বাস ও আস্থা বেড়েছে’

তিন মাস ধরে অংশীজনদের সঙ্গে এই সংলাপের মধ্য দিয়ে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের ‘আত্মবিশ্বাস ও আস্থা’ বেড়েছে বলে মনে করেন ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

মঙ্গলবার শেষ দিনের সংলাপ শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সফলভাবে এ সংলাপ শেষ করায় ইসির বড় ক্রেডিট হল নিবন্ধিত ৪০টি দলেরই সংলাপে অংশগ্রহণ।”

তিনি জানান, অংশীজনদের কাছ থেকে আসা প্রস্তাব ও পরামর্শগুলো একীভূত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সেসব গুছিয়ে পর্যালোচনা করে কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। আর সংলাপের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে নভেম্বরের মধ্যে।

হেলালুদ্দীন বলেন, “এবার সংলাপে তিনটি বিষয় লক্ষ্যণীয়।যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদের সবার কাছ থেকে সাড়া এসেছে। দ্বিতীয়ত, অংশীজনদের ভাবনাগুলো আমরা জানতে পেরেছি। তৃতীয়ত, সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনী পরিবেশের আবহ সৃষ্টি হল। এ ধারা আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।”

তিনি জানান, সংলাপ শেষে সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে কমিশন। কোন কোন বিষয় ইসির এখতিয়ারে, কোনগুলো নয়, তা চিহ্নিত করা হবে।

“নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে কোনো বিষয়ই আর ইসির সামনে চ্যালেঞ্জ হবে না, বরং নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক। এই সংলাপে তার আবহ তৈরি হয়েছে।”