সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বানে ‘পুষ্প-মঙ্গল নাট্যোৎসব’ শুরু

অন্যায়-অসত্য, অমানবিকতার বিরুদ্ধে সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে সাম্য ও শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বানে ঢাকায় শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক ‘পুষ্প-মঙ্গল নাট্যোৎসব’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2017, 07:12 PM
Updated : 22 Oct 2017, 07:32 PM

আরণ্যক নাট্যদলের ৪৫ বছরে পদার্পন উপলক্ষে এ উৎসব আয়োজন করা হয়েছে।

আরণ্যক নাট্যদলের পাশাপাশি এতে ভারত, ইরান ও নরওয়ের বিভিন্ন নাট্যদল অংশ নিচ্ছে। উৎসবের স্লোগান ‘নাটক শুধু বিনোদন নয়, শ্রেণি সংগ্রামের সুতীক্ষ্ণ হাতিয়ার’।

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত নন্দন মঞ্চে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী অভিনেত্রী লিলি চৌধুরী।

সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডস্যাল ব্লিকেন ও ইরানের রাষ্ট্রদূত আব্বাস ভেইজি দেহনভি।

লিলি চৌধুরী বলেন, “অনেক দিন হল নাট্যজীবন পেছনে ফেলে এসেছি। ঝঞ্চাবহুল জীবনের কত ঘটনা! ৯২-৯৩ সালের পর আমি আর নাট্যাঙ্গনে আসতে পারিনি। এতদিন পরও আরণ্যক আমাকে মনে রেখেছে, আমি কৃতজ্ঞ।”

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু করেছিল আরণ্যক নাট্যদল। স্বাধীনতা-উত্তর নাট্য আন্দোলনের ধারায় আরণ্যক পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “স্বাধীনতা উত্তর নাট্যধারায় দর্শনীর বিনিময়ে নাটক চর্চা যারা শুরু করেছিলেন, তাদের মধ্যে আরণ্যক অন্যতম। আরণ্যক কখনও তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। আমরা আরণ্যক বলতে বুঝি মামুনুর রশীদ। তার পুরো জীবনজুড়েই যেন আরণ্যক।”

নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডস্যাল ব্লিকেন বলেন, “সংস্কৃতির সঙ্গে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। সামাজিক-অর্থনৈতিক নানা প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতি পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নাটক তারই একটি অংশ। ভৌগলিক অবস্থান ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু সংস্কৃতি আর নাটক কিন্তু দুদেশের মানুষকে এক বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে। এই উৎসবটি নরওয়ে আর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।”

ইরানের রাষ্ট্রদূত আব্বাস ভেইজি দেহনভি ইরান ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনের কথা জানিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময় আরও জোরদারের আহ্বান জানান।

উৎসব ঘোষণায় আরণ্যকের প্রধান সম্পাদক নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, “আমরা যে শিল্পের চাষই করি না কেন, শেষ কথায় শিল্পভুবনে তা একটি ফুল হয়েই ফুটে থাকে। তেমনি আরণ্যক ৪৫ বছরে সেই ফুলের চাষ করে আসছে। যুক্ত হয়েছে মঙ্গল কামনা। সমাজের বৈষ্যমের বিরুদ্ধে আরণ্যক ঘোষণা করেছে, শ্রেণি সংগ্রামের অমোঘ বাণী। মানব কল্যাণের শেষ কথা শ্রেণিহীন শোষণহীন সমাজ নির্মাণ।

“অক্টোবর বিপ্লব পৃথিবীতে এনেছিল সাম্যবাদী সমাজের প্রতিশ্রুতি। তার শতবর্ষে আরণ্যক চায় সাম্যবাদী ও যুদ্ধহীন সমাজ।”

নাট্যকার, নির্দেশক মান্নান হীরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।

উদ্বোধনী আয়োজন শেষে জাতীয় নাট্যশালার প্রধান হলে মঞ্চস্থ হয় আরণ্যকের নাটক ‘ইবলিশ’, ‘রাঢ়াঙ’ ও ‘ময়ূর সিংহাসন’।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে আসা ঋত্বিক নাট্যদলের ‘আঁধারে সূর্য’, আগরতলার নাট্যভূমির ‘রাইমা সাইমা’, শান্তিপুরের শান্তিপুর সাংস্কৃতিক দলের ‘বৃষ্টি বৃষ্টি’, আলিপুরের প্রাচ্য নাট্যদলের ‘সখারাম’, কলকাতার আয়ন্দা নাট্যদলের ‘অনুশোচনা’ মঞ্চস্থ হওয়ার কথা উৎসবে।

২৬ অক্টোবর জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে নরওয়ের ড্রাগ প্রোডাক্সজোনের নাটক ‘হেরিটেজ’, ২৭ অক্টোবর ইরানের ‘মানাওস’ ও ২৮ অক্টোবর নন্দন মঞ্চে হংকং থেকে আসা এশিয়ান পিপলস থিয়েটার সোসাইটির পরিবেশনা রয়েছে। 

এছাড়াও প্রতিদিন নাটক মঞ্চায়নের আগে জাতীয় নাট্যশালার লবিতে আরণ্যক নাট্যদলের নাটিকা প্রদর্শিত হবে।