তার বক্তব্য শুনে ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক বাংলাদেশে আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশা প্রকাশ করেছেন বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন।
ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে রোববার রাত ৮টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।
বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং এ বিষয়ে যেসব সমস্যা রয়েছে তা তুলে ধরেছেন।
“ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সমস্যাগুলো শুনেছেন।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এখন ‘সহায়ক সরকারের’ অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবি করছে। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে সেই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে অভিযোগ তাদের।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।
আগামী বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচন নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবনা জানতে সম্প্রতি দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন।
এরমধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ ভোট করে আওয়ামী লীগ পার পাওয়ার জন্য তৎকালীন ভারত সরকারকে দায়ী করে আসছেন বিএনপি নেতারা।
খালেদা জিয়ার মুখে ‘সমস্যাগুলো’ শুনে সে সব বিষয়ে সুষমা স্বরাজ কিছু বলেছেন কি না, তা জানাননি মির্জা ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য’ হবে বলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
“ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তারা (ভারত) চান যে, অন্যান্য দেশগুলো বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকুক এবং গণতান্ত্রিকভাবেই সরকার নির্বাচিত হোক। এখানে নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয় সেটাও তিনি আশা করেন এবং সকল দলের অংশগ্রহণে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়, সেটা তিনি আশা করেন। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন যেন তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেটাও তিনি আশা করেন।”
‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ’ পরিবেশে এই বৈঠক হওয়ার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “আলোচনায় উভয় দেশের যে সম্পর্ক তাকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে।”
রাজনৈতিক আলোচনা ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হতে হবে। তাদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের নিরাপদ একটা অবস্থা তৈরি করতে হবে।
“এই ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একমত হয়েছেন এবং বলেছেন, আমরাও এটাই চাই যে, রোহিঙ্গা যারা এখানে (বাংলাদেশ) এসেছে তারা নিরাপদে যাতে দেশে ফিরে যেতে পারে এবং মিয়ানমার সরকারের ওপরে তারা (ভারত) তাদের চাপ অব্যাহত রেখেছেন। গোটা বিশ্বও চাপ অব্যাহত রেখেছে। তারা আশা করে, রোহিঙ্গারা নিরাপদ পরিবেশে দেশে ফিরে যেতে সক্ষম হবে।”
সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের এটি দ্বিতীয় বৈঠক। ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সুষমা প্রথম বিদেশ সফরে ঢাকা এলে এই হোটেলেই তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন খালেদা।
বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরপরই সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেন সুষমা স্বরাজ।