২ লাখ রোহিঙ্গার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস তুরস্কের

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই লাখের থাকা, খাওয়াসহ সব ধরনের দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তুরস্ক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2017, 02:18 PM
Updated : 22 Oct 2017, 02:22 PM

কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে এক হাজার থেকে ১২০০ একর জমিতে ‘টার্কিশ জোনে’ এসব রোহিঙ্গাকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি।

সচিবালয়ে রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে ঢাকায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওজতুর্ক সাক্ষাৎ করে রোহিঙ্গাদের জন্য তুরস্ক সরকারের সহায়তা বাড়ানোর আশ্বাস দেন।

বৈঠকের পর ত্রাণমন্ত্রী মায়া সাংবাদিকদের বলেন, “তুরস্ক এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য ২৪ হাজার ঘর করে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেড়েছে।

“আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এখন তারা আশ্বস্ত করেছে, মোট দুই লাখ লোকের জন্য ঘর করতে চিন্তা-ভাবনা করছে। এ বিষয়ে তুরস্ক সরকারের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত আলোচনা করবেন। আশা করছি আমরা এসব পেয়ে যাব।”

দুই লাখ লোকের জন্য ৫০ হাজার শেড নির্মাণে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত আশ্বাস দিয়েছেন।

মায়া বলেন, “এজন্য তারা কুতুপালংয়ে এক হাজার থেকে ১২০০ একর জায়গা চেয়েছেন। সেই জায়গায় ইতোমধ্যে চার থেকে সাড়ে চার হাজার ক্যাম্প করে রোহিঙ্গাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

“টার্কিশ জোন হিসেবে তারা জায়গাটা চিহ্নিত করেছেন। এই জোনে ৫০ হাজার শেড করে দুই লাখ রোহিঙ্গার থাকার ব্যবস্থা হবে। ওই জায়গায় যা কিছু প্রয়োজন খাওয়া, থাকা, চিকিৎসা, টিউবওয়েল, বিশুদ্ধ পানি, শেড সব দায়িত্ব তারা নেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”

‘টার্কিশ জোনের’ বাইরে থাকা কুতুপালংয়ে আরও পাঁচ থেকে সাত লাখ লোককেও তুরস্ক সহায়তা করবে বলে জানান মায়া।

তিনি বলেন, “৫০ হাজার শৌচাগার প্রয়োজন। ইউনিসেফ ১০ হাজার এবং বাংলাদেশ সরকার নয় হাজার নির্মাণ করবে। বাকি ৩০ হাজারের মধ্যে ২০ হাজার শৌচাগার তারা তৈরি করে দেবে বলে আশ্বস্ত করেছে। তাদের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী বৈঠকে জানাবেন।”

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় কুতুপালংয়ের বাসিন্দা পাঁচ থেকে ছয় লাখ বাংলাদেশি হিমশিম খাচ্ছেন বলে স্বীকার করেন ত্রাণমন্ত্রী।

“তাদের কাজ নেই, অনেকে খেতেও হিমশিম খাচ্ছেন।শুধু মিয়ানমারের নাগরিক না, স্থানীয়দেরও সহায়তা প্রয়োজন। তুরস্ক এদের জন্য খাদ্য, পানি, শৌচাগার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে বলে রাষ্ট্রদূত কথা দিয়েছেন।”

মন্ত্রী বলেন, “কুতুপালং এলাকার গাছপালা শেষ পর্যায়ে, এক দেড় মাস পরে গাছ থেকে কোনো জ্বালানি খুঁজে পাওয়া যাবে না। তুরস্ককে জ্বালানি দিয়েও সহায়তা করতে বলেছি, এ বিষয়ে তারা আশ্বস্ত করেছেন।”

কুতুপালংয়ে আট হাজার গভীর নলকূপ প্রয়োজন জানিয়ে মায়া বলেন, ইতোমধ্যে এক হাজার স্থাপন করা হয়েছে, বিদেশি সংস্থাগুলো এক হাজার করে দেবে। আমরা তুরস্ককে দুই হাজার গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিতে অনুরোধ করেছি।

“আমরা নতুন করে সাহায্যের জন্য যেসব প্রস্তাব দিয়েছি তারা তাদের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানাবেন।”

তুরস্ক তাদের দেশে ৩০ লাখ শরণার্থীকে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে জানিয়ে মায়া বলেন, আগামী নভেম্বরের শুরুতে তিনি ওই শরণার্থী শিবির দেখতে যাবেন।

ত্রাণপ্রার্থী রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারের তৎপরতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “গত তিন দিনে ৪০ হাজার মানুষ এসেছে, আরও আসার পথে। এটা কমার কিন্তু কোনো সম্ভাবনা নেই, বাড়তে পারে, বাড়তে বাড়তে কিন্তু ছয় লাখ পার করেছে।

“এক মাস ২২ দিনের মধ্যে সাত লাখ লোকরে এভাবে রাখা, এক মাস ২২ দিনের ভেতরে ২৮ দিন তুফান ও বৃষ্টি দৌড়াইছে, গতকালও, আজকে সূর্য দেখছে তিন দিন পর। এর ভেতর একটা লোকও না খেয়ে মারা যায় নাই, একটা লোক বিনা চিকিৎসায় অসুস্থ হয়ে মরে নাই। এর চেয়ে বড় জিনিস আর কী চান?”

মিয়ানমারের এই উদ্বাস্তুদের কাছে উদ্বৃত্ত ত্রাণ থাকার কথাও বলেন মন্ত্রী মায়া।

“এমন কোনো ঘর নাই যে ঘরের মধ্যে আড়াই মণ, তিন মণ, চার মণ চাল নেই। ডাল বেচে ফেলে, তেল নিয়ে বেচে ফেলে। যে চাল ঘরের মধ্যে আছে আরও দুই মাস বসে খাইতে পারবে।”

এখন পর্যন্ত দুই লাখ ৪২ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ হয়েছে জানিয়ে মায়া বলেন, নভেম্বরের মধ্যে ছয় লাখ রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ হবে। তখন সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে কত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়েও তুরস্ক সহযোগিতা করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আজকে মিয়ানমারের নতজানু অবস্থা চাট্টিখানি কথা না। জাতিসংঘ থেকে শুরু আন্তর্জাতিক চাপ এত বেশি হয়েছে মিয়ানমার সরকার নতজানু হয়ে গেছে।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব মো. শাহ কামাল এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (রোহিঙ্গা সেল) হাবিবুল কবির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।