দুই দিনের সফরে রোববার সকালে ঢাকায় আসা সুষমা সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যায় যান গণভবনে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সাংবাদিকদের বলেন, “মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে হবে।”
গত অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর ৬ লাখের মতো রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
মানবিক কারণে আশ্রয় দিলেও তাদের ফেরত নিয়ে পুনর্বাসিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।
নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের আশ্রয় দেওয়ার প্রশংসাও করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা নাম উচ্চারণ না করে শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার কথা বললেও সন্ত্রাসীদের শাস্তির কথাও বলেন সুষমা।
গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে সেনা ও পুলিশ ফাঁড়িতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে সেনা অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশাল সংখ্যার এই শরণার্থীদের বাংলাদেশের জন্য ‘বড় বোঝা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কত দিন এই ভার বহন করবে। এর একটা স্থায়ী সমাধান হতে হবে।”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা রাখার উপর জোর দেন তাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পরপরই সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব নির্ধারিত মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সুষমা স্বরাজ শেখ হাসিনাকে বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূচিকে তার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির কথাও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।
ইহসানুল করিম বলেন,“নরেন্দ্র মোদী সু চিকে বলেছেন,‘আপনার আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ভালো, এটা নষ্ট করবেন না’।”
বৈঠকে শেখ হাসিনা শরণার্থী সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশের ১৬ কোটি মানুষের অন্নের সংস্থান যেহেতু করতে পারছে, এই শরণার্থীদের খাদ্যের ব্যবস্থাও করতে পারবে।
মানবিক কারণে মিয়ানমারের এই নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার কথা এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে নিজের এবং ছোট বোন শেখ রেহানার ভারতে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নেওয়ার কথাও স্মরণ করেন তিনি।
এই সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
গণভবনে আসার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে নিজের সন্তোষের কথাও শেখ হাসিনাকে জানান সুষমা।
ইহসানুল করিম বলেন, “ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দেশের লাইন অফ ক্রেডিটে হওয়া কাজগুলোর কিছুটা দেরি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন।”
বৈঠকে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী,প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী,প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সেদেশের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্কর এবং ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
বৈঠকের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর ব্যবহৃত কিছু সমরাস্ত্র প্রদানের অনুষ্ঠান হয়।
বাংলাদেশকে শুভেচ্ছার স্মারক হিসেবে তখন ব্যবহৃত এমআই হেলিকপ্টার, দুটি ট্যাংক, ২৫টি বিভিন্ন অস্ত্র দিয়েছে ভারত।
গণভবনের অনুষ্ঠানে একটি সার্ভিস রিভলবার শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন সুষমা স্বরাজ।
আনুষ্ঠানিক সৌজন্য সাক্ষাতের পর শেখ হাসিনা ও সুষমা স্বরাজ একান্তে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন।