ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রোববার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে তার দেশের এই অবস্থান জানান।
“কেবল বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের রাখাইন রাজ্যে ফেরত যাওয়ার মধ্য দিয়েই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে,” বিবৃতিতে বলেছেন তিনি।
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে গত দুই মাসে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড, ঘরে অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ উঠেছে।
লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশ সরকার বলছে, মিয়ানমারে ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত’ এই জনগোষ্ঠীকে মানবিক কারণে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার সঙ্গে ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন করতে হবে।
এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করেছে সরকার।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ভারত জরুরি ত্রাণ সহায়তা পাঠালেও তাদের দেশে ফেরা নিয়ে এর আগে স্পষ্ট বক্তব্য আসেনি দিল্লির।
সুষমা স্বরাজ বলেন, “মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
মাহমুদ আলী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শক কমিশনের বৈঠকে তারা ভারতের প্রতি মিয়ানমারের ওপর চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবর্তনসহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়।
ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শক কমিশনের বার্ষিক বৈঠক উপলক্ষে রোববার ঢাকা আসেন সুষমা।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সহায়তার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
ভারত তাদের জন্য মানবিক ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে জানিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “ভারত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আস্থাভাজন ও বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী।”
বিভিন্ন খাতে নানা ধরনের সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক এখন ‘নতুন উচ্চতায়’ পৌঁছেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সুষমা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেয় ভারত।
“আমাদের সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ এবং এখানে সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে সব ধরনের অংশীদারিত্বের প্রতিফলন ঘটে, যা কৌশলগত অংশীদারিত্বকে ছাড়িয়ে যায়।”
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মিত্র হয়ে ভারতীয় সেনাদের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রয়োজনে সব সময় সহায়তার জন্য এগিয়ে এসেছে ভারত।”
তিনি বলেন, রাখাইন সংকট তৈরি হওয়ার পর বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকারের ‘প্রশংসাজনক পদক্ষেপে’ সহায়তার লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে তারা ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’ চালু করেন।
“আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম যে, পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে সংযতভাবে, জনগণের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে।”
বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা দমনে সহযোগিতা নিয়েও পর্যালোচনা হয়। উভয়পক্ষই সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অবিচল থাকার প্রত্যয় জানায়।
মাহমুদ আলী জানান, দুই দেশের কারও মাটি ব্যবহার করে অন্যের ক্ষতি করতে দেওয়া হবে না বলে উভয়পক্ষ অঙ্গীকার করেছে।
সুষমা বলেন, “সব পর্যায়ের সহিংস চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমন্বিত অ্যাপ্রোচ ও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে আমরা উভয়পক্ষই সন্ত্রাস, সহিংসতা ও বিদ্বেষপূর্ণ মতবাদ থেকে আমাদের সমাজকে রক্ষায় বদ্ধ পরিকর।”
ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুই প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান মেয়াদেই এই চুক্তি স্বাক্ষরের যে কথা বলেছিলেন, তা আলোচনায় উঠে এসেছে।
দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারির সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি এবং এসএমই খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে তিনটি চুক্তি-সমঝোতায় সই হয়।
২০১৪ সালের মে মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে প্রথম বিদেশ সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন সুষমা স্বরাজ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটা তার দ্বিতীয় বাংলাদেশ সফর।