উল্টোপথে বাস নেওয়া শিক্ষার্থীরা দেশকেও নেবে উল্টোপথে: ওবায়দুল কাদের

যানজট এড়াতে ঢাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাসের উল্টোপথের যাত্রায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2017, 11:25 AM
Updated : 22 Oct 2017, 06:21 PM

উল্টোপথে চলা মন্ত্রী-সচিবের গাড়ি আটকানোর পর রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সড়ক নিরাপত্তা দিবসের অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের উল্টোপথে চলার কথা তোলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যেসব শিক্ষার্থী তাদের বাস সড়কে উল্টোপথে বাস নিতে চালককে বাধ্য করে, তারা কোনোদিন দেশকে সঠিক পথে নিতে পারবে না।

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি উল্টোদিকে চলে, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, লজ্জার বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাগিদ দিয়েও এই খারাপ প্র্যাকটিস বন্ধ করতে পারেননি।

“ড্রাইভার যদি না শোনে, ড্রাইভারকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোথাও নিয়ে আটকে রাখে, তাকে মারধর করে। এটাই কি ইউনিভার্সিটির শিক্ষা?”

যানজট দেখে উল্টোপথে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবাহী বাস। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাসকেও এমন চলতে দেখা যায়। ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক

“এই শিক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। উল্টোপথে গাড়ি চালাতে ড্রাইভারকে যারা বাধ্য করে, এ ধরনের শিক্ষার্থী যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নেতা হয়। এই দেশ কোনোদিনও ভালো চলবে না,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ওবায়দুল কাদের।

উল্টোপথে গাড়ি নিয়ে যাওয়া উচ্চপদস্থদেরও সমালোচনা করেন তিনি।

“আমি পাওয়ারফুল লোক, জনপ্রতিনিধি, অসাধারণ মানুষ, অসাধারণ রাজনীতিক, অসাধারণ জনপ্রতিনিধি, অসাধারণ সাংবাদিক, অসাধারণ আইনজীবী, আমরা কেউ রাস্তার শৃঙ্খলা মানতে চাই না। এটা ঠিক নয়।”

“সাংবাদিক নয়, সাংবাদিকের স্টিকার। এমপি নয়, এমপির স্টিকার। এগুলো নীলক্ষেতে পাওয়া যায়। সব ভুয়া স্টিকার।”

‘রাস্তায় থাকেন’ বলে এসব চোখে পড়ে বলে জানান মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

উল্টোপথে যাতায়াতকারী বিরুদ্ধে এখন কঠোর হওয়ায় প্রশাসনের প্রশংসা করেন তিনি।

“আমার কথা শোনেননি, এখন দুদক ধরেছে অনেককে। ধরা হবে, কাউকে ছাড়া হবে না। সময় আসছে, এই রাস্তা নিরাপদ করতে হবে। আমাদের বাঁচতে হলে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আমরা নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলবই।”

নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠান পালনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সমালোচনা করেন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “আজকে আমরা আর্থসামাজিক অনেক সূচকে এগিয়ে গেছি। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ, সজীব ওয়াজেদ জয়ের হাত ধরে একটা নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে।

“এই দেশে আজকে নিরাপদ সড়ক দিবসের জন্য এরকম একটা দায়সারা গোছের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দায়সারা গোছের দিবস পালন করে কোনো লাভ নেই। এটাকে ঢাকঢোল পিটিয়ে করতে হবে, যেন সবার মধ্যে সচেতনতা পৌঁছে দেয়াও যায়।”

লক্কর-ঝক্কর গাড়ি দেখে ‘লজ্জা’

ঢাকার সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল সরকারের উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ঢাকার রাস্তার এরকম লক্কর-ঝক্কর বাস দেখা যায় হরহামেশাই। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“অনেক অর্জনের দেশ, বহু সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এরকম বাজে চেহারার গাড়ি! তাকানো যায় না একেকটা গাড়ির দিকে। মফস্বল শহরেও এখন অনেক ভালো ভালো গাড়ি দেখা যায়।”

“আপনারা দেশকে ছোট করছেন। ঢাকা শহরে এসে বিদেশিরার আমাদের লজ্জা দিচ্ছে আমাদের যানজটের জন্য, ফিটনেসবিহীন গাড়ির চেহারা দেখে।”

জনপ্রতিনিধিরা ‘দায়িত্বহীন’

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিরা যথাযথ ভূমিকা রাখছেন না বলে অভিযোগ করেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “এলাকার দলীয় কর্মীরা হেলমেট ছাড়া এক মোটরসাইকেলে তিনজন করে দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডারের মতো রাস্তায় চলে। তারা ঢাকা থেকে যাচ্ছেন, তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য মাইলের পর মাইল এভাবে যাচ্ছে।

“এতে একদিকে পেট্রোল খরচ করছে, অন্যদিকে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি করছে, দুর্ঘটনায় পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এগুলো প্রতিনিয়ত হচ্ছে।”

অনুনোমোদিত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশা, নসিমন, করিমন চলার জন্যও জনপ্রতিনিধিদের দায়ী করেন মন্ত্রী।

ঢাকার কাছেই মাওয়া মহাসড়কে অবাধেই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ বাহন ‘নসিমন’। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

“এ ­ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের দায়দায়িত্ব নেই? তাদের এলাকায়ই তো এসব ইজি বাইকের কারখানা।”

অনুষ্ঠানে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনও জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন,  “সবাই কাজ করলেও এই একটা জায়গায় এখনও তারা কাজ করছেন না। উনারা অন্য অনেক ভালো কাজও করেন। কিন্তু তাদের এলাকার সড়ককে নিরাপদ করার জন্য কোনো কাজ করছেন না।”

সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির প্রায় দুই ভাগ পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হচ্ছে বলে পরিসংখ্যান তুলে ধরেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, শুধু চালকদের কারণে নয়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পথচারী এবং যাত্রীদেরও করণীয় আছে।

মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ শুধু অবকাঠামো না থাকা নয়, জনগণের সচেতনতার অভাবও এর জন্য দায়ী।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম, সড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, সড়ক বিভাগের সাবেক সচিব এমএনএ সিদ্দিক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান।