জলাবদ্ধতার কী দেখেছেন, কলকাতা বোম্বে যান: খন্দকার মোশাররফ

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের কলকাতা বা মুম্বাইয়ের মত শহরে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন  ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2017, 10:05 AM
Updated : 22 Oct 2017, 06:32 PM

নিম্নচাপের প্রভাবে দুই দিনের বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতার ভোগান্তির পর রোববার ঢাকার একটি হোটেলে ‘মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক’  এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রীর এমন বক্তব্য আসে।

তিনি বলেন, “ঢাকার জলাবদ্ধতা কী দেখেছেন, কলকাতা যান, বোম্বে যান। পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান সিটিতে এটা একটা সমস্যা। আমরা এর সমাধান করব।”

ঢাকার ভেতরে থাকা ৪৭টি খালের সবগুলো পুনরুদ্ধার হলেই সরকার সেগুলো খননের মাধ্যমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে এবং এক বছরের মধ্যে জলাবদ্ধতার সমস্যা ঢাকায় আর থাকবে না বলে আশ্বাস দেন মন্ত্রী।

এক বছর আগেও এমন আশ্বাস দিয়েছিলেন- এক সাংবাদিকের এমন মন্তব্যে খন্দকার মোশাররফ, “আমি এটা তিন মাস আগে বলেছি। আমাদের সময় দেন।”

জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকার কী কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলা যাবে? এটা তো বিরাট ব্যাপার। আজকে যদি আপনি হিসাব দেখেন, ঢাকায় জনসংখ্যা হওয়া উচিত ছিল ৭৫ লাখ থেকে এক কোটি। সে জায়গায় ঢাকার জনসংখ্যা তিন গুণ বেড়ে গেছে।”

অপরিকল্পিতভাবে ঢাকা মহানগরীর বৃদ্ধির কারণেই পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা ‘তাল মেলাতে পারছে না’ বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।  

তিনি বলেন, “সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সিটি করপোরেশনকে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের নেতৃত্বে ওয়াসা কাজ করলে পর্যায়ক্রমে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে সক্ষম হবে এবং করতেই হবে। এর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া উচিতও না।”

জলাবদ্ধতার প্রতিটি ঘটনার সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছে এবং তা নিরসনের উপায় খুঁজে বের করছে বলে জানান খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “আমাদের সময় দেন। সমস্যা নিরসনে মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, “আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি ওয়াসার সাথে সমন্বয় করে কাজগুলো করে যাওয়ার জন্য। তবে আইন অনুযায়ী মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার।”

এ সময় আইন থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “আমি যদি ভুল না করে  থাকি, বর্ষণজনিত পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার।

“অবশ্যই সিটি করপোরেশন ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করে থাকে এবং কিছু ড্রেনেজও তাদের আছে। আরও ছয়টি সংস্থা কিন্তু ঢাকা শহরের পানি নিষ্কাশনের কাজে জড়িয়ে আছে। কিন্তু এটার মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার।”

শনিবার ঢাকার নটরডেম কলেজের সামনের সড়কে জলাবদ্ধতার চিত্র

মেয়র বলেন, যেসব কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে, সমন্বয়ের মাধ্যমে সেগুলোর নিরসনের বিষয়ে তিনি আশাবাদী। তবে তা সময়সাপেক্ষ বিষয়।

“কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয় হল, দুই দিনে যদি ২৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়… এত অধিক বর্ষণে জলাবদ্ধতা হবে- এটা স্বাভাবিক।”

তিনি বলেন, “বৃষ্টি কমে গেছে, পানিও নেমে গেছে। তারপরও নাগরিক ভোগান্তি আগামীতে যাতে তীব্র না হয়, মানুষ যাতে সুন্দরভাবে চলতে পারে সেজন্য মন্ত্রীর (স্থানীয় সরকার) নেতৃত্বে কমিটি আছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

এ পরিস্থিতি ‘দুই চার পাঁচ দিনে’ হয়নি, ‘পঁচিশ, ত্রিশ, চল্লিশ বছরে’ সমস্যা এ পর্যায়ে এসেছে মন্তব্য করে মেয়র বলেন, “আমাদের একটু সময় দিন।”

ওয়াসার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সমম্বয়হীনতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, “মন্ত্রীর নেতৃত্বে সবগুলো সংস্থা এক সাথে কাজ করে। কিন্তু সবাই যে এক সাথে কাজ করবে তা নয়।  হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান নয়। তিনটি সংস্থা অ্যাক্টিভলি কাজ করলে আর একটা সংস্থা দুর্বল হতে পারে। সে জায়গাটুকু মাননীয় মন্ত্রীর নেতৃত্বে সময়মত ঠিক হয়ে যাবে।