রাত ৮টার মধ্যে টিএসসি বন্ধের নির্দেশনায় ক্ষোভ

প্রতিদিন রাত ৮টার মধ্যে কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রভিত্তিক (টিএসসি) বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা। তারা বলছেন, এতে বাধাগ্রস্ত হবে মুক্তিবুদ্ধির চর্চা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2017, 03:10 PM
Updated : 21 Oct 2017, 03:33 PM

টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম প্রতিদিন রাত ৮টার মধ্যে শেষ করতে মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে নিদের্শনা দেয় কর্তৃপক্ষ ।

টিএসসির পরিচালক এ এম মহিউজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সেখানে কার্যক্রম চালানো ১৭টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, “টিএসসিতে অবস্থিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে বিবিধ বিবেচনায় নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ নিজ কার্যক্রম রাত আটটার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। তবে কাজের স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এই সময় রাত ১১টা পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।”

এই নির্দেশনাকে মুক্তবুদ্ধির চর্চায় ‘ওপেন থ্রেট’ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফররুখ মাহমুদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের সিদ্ধান্তটা মুক্তবুদ্ধির চর্চার জন্য একটা ওপেন থ্রেট। সবাই যেকোনো সময় মুক্তিবুদ্ধি চর্চা করবে, সেই জায়গাটায় বাধাগ্রস্ত করা হবে।”

এধরনের সিদ্ধান্তগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে ভেবেচিন্তে নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

এতে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়বে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি এফ এম আরিফ শোভন।

তিনি বলেন, “টিএসসিতে গড়ে উঠা সংগঠনগুলো মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করে। আর এসব সংগঠনের সবাই শিক্ষার্থী, তাদের সারাদিন একাডেমিক কার‌্যক্রম সেরে সন্ধ্যাবেলা সংগঠনের কাজ করে।

নিজের সংগঠনের কার্যক্রমের কথা জানিয়ে শোভন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে কখনই দিনের বেলা সময় হয়ে উঠে না। সপ্তাহে একদিন এবং মাসে একটা পাঠ্যক্রম থাকে, চলচ্চিত্রের ওপর আলোচনা হয়। রাতের বেলায়েই কাজ শেষ করতে হয়।”

তিনি আরো বলেন, “এই সিদ্ধান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক যে মুভমেন্ট আছে, তাতে ভাটা পড়বে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক যে মান আছে সেটাও কমে যাবে।”

রুটিন অনুযায়ী ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর‌্যন্ত নিয়মিত সংগঠনের কাজ সেরে হলে ফেরার কথা জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আসমা আক্তার ইতি।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষার পরে মূলত সংগঠনে সময় দেই। আমার কাছে মনে হয়- ক্লাবগুলোকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটা সময়সূচি করতে পারত, কিন্তু হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এরকম সময় বেঁধে দিলে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে।”

এই সিদ্ধান্তের ফলে মেয়েদের আরো বেশি সমস্যা পড়তে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “অনেকে সমাজের জন্য করতে চায় বলেই তারা এখানে আসে অফিসিয়াল ক্লাস-পরীক্ষা শেষে। কিন্তু সময় বেঁধে দেওয়ার ফলে তারা আর হয়ত আসবে না, নানা ধরনের সমস্যা পড়তে হবে।”

‘স্লোগান ৭১’ এর সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক বলেন, “টিএসসির সংগঠনগুলো মূলত সামাজিক-সাংস্কৃতিক চর্চা করে থাকে, এইসংগঠনগুলোর জন্য তো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত না।

“কারণ সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রটাই তো টিএসসি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোথাও তো সংস্কৃতিচর্চা হয় না। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাই।”

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “এই সিদ্ধান্তটি অগ্রহণযোগ্য। সংস্কৃতিচর্চার ওপর আঘাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতিচর্চার মূল কেন্দ্রবিন্দু টিএসসি।”

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রোববার জোটের টিএসসির পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে দেখা করবেন বলে জানান তিনি।