বৃষ্টিতে এদিন পুরান ঢাকা থেকে শুরু করে পল্টন, মালিবাগ-মৌচাক ও রাজারবাগ এলাকা, মিরপুরের বিভিন্ন অংশ, বাড্ডা ও রামপুরা ও ধানমন্ডিসহ রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সকালে অফিসগামী যাত্রীদের গণপরিবহনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার প্রায় সব এলাকায় কমবেশি পানি জমে।
জল সরাতে সড়কের ম্যানহোল এবং নিষ্কাশন নালার পিটগুলো খুলে দেওয়ার কাজ করে সিটি করপোরেশন।
এ কাজে ডিএসসিসির ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম’ মাঠে নামানো হয় বলে জানান ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা শফিকুল আলম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ময়লা জমে ড্রেনের অনেক জায়গায় ব্লক হয়েছে। সেগুলো আমরা ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। চারদিকে আমাদের লোক নেমেছে। রাতেও তারা কাজ করেছে।
এদিকে মালিবাগের দিকে মালিবাগ, রাজারবাগ, মৌচাক, শান্তিবাগ, গুলবাগ, মোমিনবাগসহ বিভিন্ন অলি-গলির সড়ক চলে যায় পানির নিচে। কাকরাইলের নাইটিঙ্গল রেস্তোরাঁ থেকে পল্টন মডেল থানার সড়কেও পানি উঠে বিভিন্ন ফুটপাতে।
মতিঝিলের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবদুল হালিম দুপুরে কাকরাইল এলাকায় ছাতা নিয়ে প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন যানবাহনের অপেক্ষায়।
তিনি বলেন, “রামপুরা থেকে হেঁটে এসেছি। রিকশার ভাড়া অনেক বেশি। রামপুরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যেতে রিকশাওয়ালারা ১০০ টাকার নিচে যেতে চান না। তাই হাঁটা ছাড়া উপায় কী?”
মালিবাগ থেকে মৌচাক পর্যন্ত ফুটপাতে সকাল থেকে হকাররা বসে। এদিন সকাল থেকে সেই ফুটপাত ছিল একেবারই ফাঁকা। চা বিক্রেতা হাকিম উদ্দিন বললেন, “খুবই খারাপ দিন যাইতাছে। কালকেও বিক্রি নাই। আজকেও হবে বলে মনে হইতেছে না।”
অবিরাম বৃষ্টির কারণে মালিবাগ-মৌচাকের দোকান-পাটও সকালে খুলছে না।
গুলবাগ, শান্তিবাগ, মোমিনবাগসহ এই এলাকায় ভেতরের রাস্তাগুলোতেও পানি জমে। মানুষজনকে পানি ডিঙিয়ে বাইরে বের হতে হয়।
ফুটপাতে গেঞ্জি ও প্যান্টের বিক্রেতা ফজলুল হক বলেন, “বৃষ্টির কারণে বিক্রি একেবারেই কম। গতকাল বিক্রি করেছি মাত্র ৫টা গেঞ্জি। কিভাবে দিন যাবে বুঝতে পারছি না।”
তিনি জানান, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৪০/৪৫টি গেঞ্জি বিক্রি হয়।
মালিবাগ, পল্টনের সড়ক পথের পাশের কয়েকটি হোটেলের কর্মচারীরা জানান, বৃষ্টির কারণে মানুষজন প্রায় আসেনি।
শনিবার স্কুল-কলেজ ও সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের কোচিং খোলা থাকে। মালিবাগ মোড় থেকে অনেক শিক্ষার্থী ফার্মগেইট এলাকায় কোচিং করতে যায়।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী আফজাল উল হক ও রিফাত করীম বলেন, তারা ফার্মগেইটে কোচিং যাবেন। আধা ঘণ্টার বেশি দাঁড়িয়েও কোনো বাস পাচ্ছেন না। অথচ এই সড়কে সকালে প্রচুর যানবাহন পাওয়া যায়।
বৃষ্টিতে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর, শুক্রবাদ, ফার্মগেট ও ইন্দিরা রোডে এলাকায়ও জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এসব এলাকার কোথাও কোথাও কোমরপানিও দেখা গেছে।
মিরপুর ৬০ ফিট এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম মুনা বলেন, “এখানে চতুর্দিকে পানি জমে গেছে। বাজার করতে মিরপুরে-১ নম্বরে যাওয়ার কথা থাকলেও বের হয়ে হাঁটুপানি দেখে ফিরে আসি।”
রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও, সবুজবাগ, বাসাবো, যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায় বলে জানান এলাকাবাসীর অনেকে।
মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা ইশতিয়াক হাসান মতিঝিলে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বলেন, বাসার সামনে কোমর সমান পানি। তা ডিঙিয়ে মেইনরোডে এসে দেখি গুলিস্তান রুটের বাস নেই। অফিস ধরতে হবে, অন্য রুটের বাস ধরে যাচ্ছি।
মেরুল বাড্ডা থেকে কোতোয়ালি যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরোন মেডিকেল কলেজের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা দাশ।
তিনি বলেন, “বাস দুই-একটা এলেও তাতে মহিলা যাত্রীদের উঠার উপায় নেই। বাসের হেল্পার-কন্ডাক্টর বলছে, মহিলা সিট নাই।”
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রামপুরা ব্রিজে অপেক্ষারত যাত্রী সোহেল মাহমুদ বলেন, ডেমরা রুটের বাস পাচ্ছেন না। ৩০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
বনশ্রী থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনমুখী ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ বলেন, “কমলাপুর আসার পথে দেখলাম মালিবাগের চৌধুরীপাড়া এলাকায় কোমর সমান পানি। খিলগাঁও ডিসিসি মার্কেট থেকে আবুল হোটেল মার্কেট পর্যন্ত আসার পথটি পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো যানবাহন চলছে না। মালিবাগ রেলগেইটেও একই অবস্থা।”
এছাড়া যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, কাজলা ও ডেমরা এলাকার বিভিন্ন সড়কেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার কথা জানান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক জয়ন্ত সাহা।
নরসিংদী যাওয়ার পথে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একজন প্রতিবেদক জানান, যাত্রাবাড়ী থানা, কাজলা, মাতুয়াইল এলাকায় অফিসগামী যাত্রীদের বেশ বিপাকে পড়তে দেখেছেন।
বিমানবন্দর সড়কের বিভিন্নস্থানের দুই পাশেই পানি জমে ছিল। অন্যদিনের তুলনায় এদিন এ সড়কে কম যানবাহন থাকলেও পানির কারণে দুপুর ১২টার দিকে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত যানজট দেখা যায়।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে সড়কের জলাবদ্ধতায় দূরপাল্লার বাসযাত্রাও ব্যাহত হয়। মহাসড়কে যানজটের পাশাপাশি পর্যাপ্ত যাত্রী না পেয়ে রাজধানীর টার্মিনালগুলো থেকে বাসও ছাড়ছিল কম।
সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে কুমিল্লাগামী যাত্রী সবুজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক ঘণ্টা ধরে বাসে বসে আছি। বাস ছেড়ে যাওয়ার নাম নেই। কিছু বললে কন্ডাক্টর বলছে, যাত্রী না হলে বাস ছাড়বে না।”
সিলেটগামী মিতালী পরিবহনে চালকের সহকারী মামুন বলেন, “যাত্রীই তো নাইগা, তার উপ্রে শনিবার। আমাগোও তো পেট চালান লাগব, মালিকরে ট্যাকা দেওয়া লাগব। হেইডা তো যাত্রীরা বুঝতাসে না। খালি কয় মামা গাড়ি টান দেও।”।