দীপাবলীতে আঁধার কেটে মঙ্গল কামনা

‘মঙ্গল দ্বীপ জ্বেলে অন্ধকারে দু চোখ আলোয় ভরো প্রভু’, ‘প্রতি প্রাণে জ্বলুক জ্ঞানের আলোকশিখা’-অন্ধকার সরিয়ে সবার মঙ্গল কামনায় এভাবে দীপাবলীতে প্রার্থনা করলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2017, 05:51 PM
Updated : 19 Oct 2017, 05:51 PM

মনের ভেতরের আসুরিক শক্তির বিনাশ আর প্রীতিময় এক বিশ্ব গড়ে তুলতে দেবী কালীর কাছে বর প্রার্থনা করলেন তারা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বৃহস্পতিবার উদযাপন করলেন অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দীপাবলী বা দীপান্বিতা উৎসব।দেশজুড়ে নানা আয়োজনে এই উৎসব হয়।

রাজধানীর রাজারবাগ বরদেশ্বরী কালি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত গোপাল চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ দিনে আমরা আলোক প্রজ্বলন করে সব আঁধার দূর করার আহ্বান জানাই। দেবী কালির পূজা শেষে আমরা সমবেত কণ্ঠে প্রার্থনা করি, মা যেন আমাদের সকলের মনের সব গ্লানি, সব ক্লেশ দূর করেন। সমস্ত বিশ্ব চরাচরে সবাই যেন জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়।”

আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ‘ধনতেরস’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয়। দ্বিতীয় দিনটিকে বলে ‘নরক চতুর্দশী’। তৃতীয় দিন অমাবস্যায় কালীপূজা হয়, এদিনই উদযাপিত হয় দীপাবলীর মূল উৎসব। চতুর্থ দিন কার্তিক ‘শুক্লা প্রতিপদ’। এই দিন বৈষ্ণবরা গোবর্ধন পূজা করেন। পঞ্চম দিন ‘ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া’ বা ‘ভাইফোঁটা’, একে ‘যমদ্বিতীয়া’ও বলা হয়।

হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী, দীপাবলীর এই দিনে বিষ্ণুর বামন অবতার অসুর বলিকে বধ করেন। হিন্দুদের বিশ্বাস, ভালোবাসা ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বলিত করতে অসুর বলিকে পৃথিবীতে এসে অযুত অযুত প্রদীপ জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া হয় দীপাবলীর এ দিনে।

তবে দীপান্বিতা উৎসবটি এসেছে মূলত রামায়ণ থেকে।রামায়ণ অনুসারেই দীপাবলী তিথির প্রচলন বলে অনেকে মনে করেন।

কথিত আছে, ত্রেতা যুগে দীপাবলী দিনে রামচন্দ্র রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। রামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে সারা রাজ্যজুড়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়, রাজ্যজুড়ে বাজি উৎসব করেন প্রজারা।

দীপান্বিতা তিথিতে হিন্দুরা ঘরে ঘরে মাটির প্রদীপ জ্বালেন। এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক। বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে লক্ষ্মী আসেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। অমঙ্গল বিতাড়নের জন্য আতসবাজিও পোড়ানো হয়।

গোপাল চক্রবর্তী জানান, এদিনে লক্ষ্মীপূজাও করা হচ্ছে। কথিত আছে, এই দিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী ‘বরধাত্রী’ রূপে ভক্তের মনোকামনা পূর্ণ করেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল বলেন, “আজ আমাদের নিজেদের মনের সব কালোকে দূর করার দিন, মনের অসুরকে বধ করার দিন। দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে সবাই যেন প্রীতির বন্ধনে একে অন্যের বিপদে এসে পাশে দাঁড়ায়, সেই শপথ নিয়েছি আমরা।”

দীপান্বিতার দুদিন পরেই ‘ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া’ বা ‘ভাইফোঁটা’, একে ‘যমদ্বিতীয়া’ও বলা হয়।

হিন্দু পুরাণ মতে, এ দিনে নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তার বোন সুভদ্রার কাছে আসেন তখন সুভদ্রা তার কপালে ফোঁটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়।এদিন ভাইদের মঙ্গল কামনায় বোনেরা তাদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে থাকেন।

রমনার আনন্দময়ী আশ্রমে পূজা দিতে আসা নারিন্দার বাসিন্দা চন্দন চক্রবর্তী  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পৃথিবীজুড়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে। সীমান্তে, সমুদ্রে মানুষের লাশের স্তূপ আমাদের মানবতাবোধকে প্রতি পদে ধিক্কার দিচ্ছে। আসুরিক শক্তির জয়ধ্বনি যেন চারিদিকে। অন্ধকারের বিপরীতে আলো জ্বেলে আমরা আজ প্রজ্ঞার আহ্বান করেছি।”