তুরাগ তীরে ‘৩০ জনের অবৈধ স্থাপনা’

তুরাগ নদীর টঙ্গী কামারপাড়া ব্রিজের দুই পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরও কোনো অবৈধ স্থাপনা আছে কি না, তার বিচারিক তদন্তের প্রতিবেদন জমা পড়েছে হাই কোর্টে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2017, 05:29 PM
Updated : 19 Oct 2017, 05:29 PM

এতে নদী তীরের ওই এলাকায় ৩০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন।

তিনি সাংবাদিকদের জানান, হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্ত করে বৃহস্পতিবার গাজীপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। আগামী রোববার তা আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ গত বছরের ২৭ নভেম্বর আংশিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেও আদালত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলে।

এছাড়া চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিআইডব্লিউটিএ একটি সচিত্র তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে ওই এলাকা থেকে ৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

“কিন্তু আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ ছিল যে, নদীর জমিতে আরও অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। পরে বিষয়টির পুনরায় তদন্ত চেয়ে আবেদন করলে আদালত বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয়,” বলেন মনজিল মোরসেদ।

তিনি বলেন, “প্রতিবেদনে ৩০ প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে, যারা অবৈধভাবে দখল করে আছে। প্রতিবেদনে তার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে।”

মনজিল মোরসেদ বলেন, “এরা তুরাগ নদীর জায়গা দখল করে আছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য রোববার আদালতে আবেদন করব।”

সেতুর উপর থেকে দেখা তুরাগ তীর (গুগল স্ট্রিট ভিউ)

গত বছরের ৬ নভেম্বর ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে ‘টাইম টু ডিক্লেয়ার তুরাগ ডেড’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে বিভিন্ন অংশে তুরাগ নদী ভরাটের মাধ্যমে স্থাপনা নির্মাণের তথ্য তুলে ধরা হয়।

প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে গত ৭ নভেম্বর মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ রিট আবেদন করেন।

ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে গত বছরের ৯ নভেম্বর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তুরাগ নদীর ওই এলাকায় মাটি ভরাট, দখল ও নির্মাণ কাজ বন্ধে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান, ওয়াপদা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং টঙ্গী ও তুরাগ থানার ওসিকে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।

নদী ভরাটের সঙ্গে জড়িতদের নামের একটি তালিকা তিন সপ্তাহের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় জেলা প্রশাসককে ।

ভরাট বন্ধে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করে আদালত।

নদী দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কেন পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং যেটুকু ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে তা ভরাটকারীদের নিজ খরচে অপসারণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

পরে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বিআইডব্লিউটিএ গত বছরের ২৭ নভেম্বর আংশিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে আদালত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলে।

পরে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ তুরাগ নদীর টঙ্গী কামারপাড়া সেতুর দুই পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরও কোনো অবৈধ স্থাপনা আছে কি না, তার বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেয়।

তদন্তকাজে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, তুরাগ এবং টঙ্গী থানার ওসিকে সহযোগিতা করতে বলা হয়।

কয়েক দফা সময় নিয়ে সেই প্রতিবেদনটিই বৃহস্পতিবার জমা পড়ল আদালতে।