দেশভাগের ইতিহাস-কথন ‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’

দেশভাগের প্রেক্ষাপটে দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের গল্প নিয়ে প্রকাশিত হল ভারতের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ অলকনন্দা প্যাটেলের গ্রন্থ ‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2017, 11:08 AM
Updated : 17 Oct 2017, 11:08 AM

সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে স্মৃতিমথিত এ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়।

এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ এম সাইদুজ্জামান, বেঙ্গল পাবলিকেশনসের নির্বাহী পরিচালক আবুল হাসনাত এবং লেখিকা অলকনন্দা প্যাটেল।

বইটি লেখিকার বাবা অমিয়কুমার দাশগুপ্তের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালের সময় ঘিরে রচিত। তার বর্ণনায় উঠে এসেছে ভারত ভাগ পূর্ববর্তী পুরানা পল্টন, গেণ্ডারিয়া, আরমানিটোলা, ওয়ারী, লক্ষ্মীবাজারসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, বরিশাল ও গৈলার স্মৃতি। দেশভাগের প্রেক্ষাপট এবং হিন্দু-মুসলমান রেষারেষির বিষয়টিকে উপজীব্য করে তুলেছেন অলকানন্দা।

বইটিতে সংযোজিত লেখিকার বিভিন্ন চিঠিতে ৩০ ও ৪০-এর দশকের ঢাকাসহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থাসহ নানা বিষয় উঠে এসেছে।

বইটির নাম ‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’ হলেও এর ৯০ ভাগ জুড়ে রয়েছে ঢাকা, বরিশাল ও গৈলা এবং ১০ ভাগ জুড়ে রয়েছে দিল্লি, কলকাতা, হার্ভার্ড, আহমেদাবাদসহ অন্যান্য অঞ্চলের বর্ণনা।

বইটিতে আলোচিত হয়েছেন অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, মাজহারুল হকসহ গুণী ব্যক্তিত্বরা।

বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত বইটি প্রসঙ্গে অলকনন্দা প্যাটেল বলেন, “বইটির নাম ‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’- কারণ আমাকে আমার ছোট্ট জগৎ ছেড়ে হঠাৎ বৃহৎ পৃথিবীতে বেরিয়ে পড়তে হয়েছিল। এ বোধ আমায় দুঃখ দিয়েছিল, কিন্তু আমি বা আমরা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হইনি কখনো। তবে দেশছাড়ার যে কষ্ট তা আমার সব সময়ই ছিল, আছে।”

দেশভাগের সেই দুঃসহ স্মৃতি প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘প্রণীত জীবনের’ কথা।

বইটির প্রকাশক আবুল হাসনাত বলেন, “এ গ্রন্থটির একটি অংশ প্রথম প্রকাশিত হয় ‘কালি ও কলমের’ একটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যায়। এরপরই সে লেখাটি নিয়ে সৃষ্টি হয় কৌতুহল।”

তারপরই তিনি লেখিকাকে উৎসাহিত করেন তার স্মৃতিতে থাকা ৩০-৪০ দশকের পূর্ব বাংলার চিত্র গ্রন্থরূপে লিপিবদ্ধ করতে। এরপর বহু সময় নিয়ে বারবার যাচাই-বাছাই পরিমার্জনের ফসল এ গ্রন্থ।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “বইটির জন্য অনেক চিঠি উদ্ধার করতে গিয়ে লেখক বেশ পরিশ্রম করেছেন। অনেকের সাক্ষাৎকার তিনি গ্রহণ করেছেন। দেশভাগের যন্ত্রণার পাশাপাশি এখানে অনেক উঠে এসেছে সাম্প্রদায়িকতার কথা।”

‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’ গ্রন্থটিকে একটি ‘অসাধারণ মানবিক দলিল’ হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, এটি একটি ভালোবাসার ফসল। ঢাকার যেসব জায়গায় গ্রন্থ রচয়িতা ছিলেন সে সব জায়গার কথা তিনি ভালোবাসায় উল্লেখ করেছেন। বইটি একই সঙ্গে তার স্মৃতি ও গবেষণার নিদর্শন। বইটির পাতায় পাতায় গভীর মমতা  জড়িয়ে আছে।”