এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং জে বি এম হাসানের হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার রুলসহ তিন দফা নির্দেশনা দেয়।
নির্দেশনা
১. ব্লু হোয়েল বা এ জাতীয় ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা দানকারী’ ইন্টারনেট ভিত্তিক গেইমের গেইটওয়ে লিংক ও অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করতে হবে।
২. রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশের সব মোবাইল অপারেটরের ‘রাত্রিকালীন বিশেষ ইন্টারনেট অফার’ ছয় মাসের জন্য বন্ধ থাকবে।
৩. ব্লু হোয়েলসহ এ জাতীয় ইন্টারনেট ভিত্তিক গেইমে আসক্তদের চিহ্নিত করতে এবং প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং দিতে অভিজ্ঞদের নিয়ে একটি ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করতে হবে।
তথ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসিকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলেছে আদালত।
আদালতে রিটকারীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব; রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।
কথিত ব্লু হোয়েল গেইমের ‘ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যাকারী’ রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণার (১৩) বাবা অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্ধন, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওসার ও ব্যারিস্টার নূর আলম সিদ্দিক গত রোববার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন।
আইনজীবী পল্লব বলেন, দেশের সব মোবাইল অপারেটরের রাত্রিকালীন বিশেষ ইন্টারনেট অফার কেন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং বিপদজনক এসব ‘মারণখেলা’ ও সাইবার অপরাধ থেকে জনগণকে সচেতন ও সুরক্ষা দিতে কেন নীতিমালা করার নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চেয়েছে আদালত।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্রসচিব, শিক্ষাসচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব, আইনসচিব, স্বাস্থ্যসচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এবং মোবাইল অপারেটরদের চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
তখন আদালত জানতে চায়, সেই আইনজীবী কে।
আদালতে উপস্থিত আইনজীবী সুব্রত বর্ধন এ সময় উঠে দাঁড়ালে বিচারক জানতে চান, তার মেয়ে কবে মারা গেছে, তার বয়স কত ছিল, কোন ক্লাসে পড়ত।
সুব্রত বর্ধন তখন বলেন, তার মেয়ে স্বর্ণ মারা গেছে গত ৫ অক্টোবর। ওর বয়স ছিল ১৪ বছর। হলিক্রস স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ‘ফার্স্ট গার্ল’ ছিল।
আইনজীবী সুব্রত বর্ধন তার মেয়ের একটি ছবি এ সময় আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর বিচারক বলেন, “যার চলে যায়, সেই বোঝে বিচ্ছেদের কী যন্ত্রণা!”
‘ব্লু হোয়েল’ বা ‘ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ’ একটি অনলাইন গেইম, যা অংশগ্রহণকারীকে মৃত্যুর পথে নিয়ে যায়।
এই গেইমে খেলোয়াড়দের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিভিন্ন কাজ করতে দেওয়া হয়, শুরুতে হালকা কিছু কাজ দেওয়া হলেও ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর সব কাজ দেওয়া হয়। সব শেষে চূড়ান্ত কাজ হিসেবে খেলোয়াড়কে আত্মহত্যা করতে বলা হয়।
২০১৩ সালে রাশিয়ায় ‘এফ৫৭’ নামে যাত্রা শুরু করে গেইমটি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ফিলিপ বুদেইকিন নামের এক সাবেক মনোবিদ্যা শিক্ষার্থী গেইমটি তৈরি করেন। ওই গেইম খেলে ১৬ কিশোরীর আত্মহত্যার পর বুদেইকিনকে রাশিয়ায় আটক করা হয়।
‘ব্লু হোয়েল’ গেইমে বাংলাদেশেও আত্মহত্যার খবর গণমাধ্যমে আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গত সপ্তাহে বিটিআরসিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন।
এর ধারাবাহিকতায় বিটিআরসি তিন দিন আগে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়। ইন্টারনেটে ব্লু হোয়েল কিংবা এর মতো জীবনবিনাশী কোনো গেইমের তথ্য পেলে ২৮৭২ নম্বরে ফোন করে তা জানাতে বলা হয় সেখানে।