যেখানে সেখানে বাড়ি তৈরি বন্ধ হচ্ছে: মন্ত্রী

নগর পরিকল্পনা নিয়ে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগের কথা জানিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এই আইন বাস্তবায়ন হলে আর যেখানে সেখানে ইচ্ছামতো বাড়ি তৈরি করা যাবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2017, 02:28 PM
Updated : 15 Oct 2017, 02:28 PM

গ্রামে বাড়ি নির্মাণেও অনুমোদনের দরকার বলে জানিয়েছেন তিনি।

রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘নগরের দরিদ্রদের জন্য গৃহায়ণে অর্থায়ন’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা বলেন।

তিনি বলেন, “যদি আমাদের ধানি জমি বাঁচাতে হয়, ফসলি জমি বাঁচাতে হয় তাহলে যত্রতত্র বাড়ি নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।

এদেশকে বাঁচাতে হলে জমি বাঁচাতে হবে, আর জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।”

শহরে ছোট ছোট ঘর তৈরি করলে তা বস্তির মতো হয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আবাসন সমস্যা দূর করতে সম্মিলিতভাবে বহুতল ভবন তৈরি করে সেখান থেকে অংশীদারদের অ্যাপার্টমেন্ট বরাদ্দ দিতে হবে।

অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি তৈরি নগরে জলাবদ্ধতারও অন্যতম কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, “আমরা নগর পরিকল্পনা আইন নামে একটি আইন তৈরি করেছি। এটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য আছে। এ আইন বাস্তবায়ন শুরু হলে আর যেখানে সেখানে বাড়ি করা যাবে না।

“এরপর গ্রামে বাড়ি নির্মাণের জন্যও পারমিশন দরকার হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা টিএনও থেকে নিতে হবে। ওই বাড়ি অবশ্যই ভূমিকম্প সহনীয় হতে হবে।”

চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে সব বাসা-বাড়ি বহুতল ভবনে দেখার কথা জানিয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, “তাদের বিশাল জমি পড়ে আছে। তারপরও সুশৃঙ্খলভাবে বাড়ি তৈরি করেছে, যাতে অন্যান্য জমির সঠিক ব্যবহার করতে পারে।”

মন্ত্রী বলেন, দেশে মোট বাড়ির ৮১ ভাগ গ্রামে, এর মধ্যে ৮০ ভাগই নিম্নমানের।

“জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন ২৩৫ হেক্টর কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। তাই শুধু নগরীতে বসবাসের জন্য নয়, গোটা দেশের জন্য পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার।”

নগরীতে জনসংখ্যার চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন বস্তি গড়ে উঠছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এভাবে আবাসন সমস্যার মোকাবেলা সম্ভব নয়। এটা বন্ধ করতে হবে। তাই জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধীনে গ্রামাঞ্চলে শিগগিরই ১০ হাজার নতুন অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধির উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, “আপনারা স্থানীয় জনগণকে সচেতন করুন, ন্যাশনাল হাউজিংয়ের অধীনে ফ্ল্যাট নির্মাণে আমরা টাকা দেব। শুধু ব্র্যাক নয়, অন্যান্য যে কোনো বেসরকারি সংস্থা এ সংক্রান্ত কাজে এগিয়ে আসলে আমরা তাদের সঙ্গেও কাজ করব।”

অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, দ্রুত নগরায়ন, ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা, জমির অপ্রতুলতার কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ বাসস্থান গড়া এই সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ছোট ছোট টিনের ঘরের পরিবর্তে বহুতল ভবন নির্মাণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, নদী ভাঙন, দারিদ্র্য ও জীবিকার তাগিদে মানুষ প্রতিনিয়ত ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে ছুটে আসছে। এই মানুষের জন্য পরিকল্পিত বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

এজন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা, হাউজিং কোম্পানি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটিসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করে একটি মডেল হিসেবে ২০০ পরিবারকে নিয়ে টোকিও, সিঙ্গাপুর বা দক্ষিণ কোরিয়ার আদলে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।

ব্র্যাকের স্ট্রাটেজি কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট কর্মসূচির পরিচালক আসিফ সালেহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাজশাহীর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামাল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক মোহাম্মদ আক্তার মাহমুদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে নগর বিশেষজ্ঞ সালমা এ শফি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে আবাসন সমস্যা দূর করতে হলে শহরে প্রায় ৮৫ লাখ ইউনিট, আর গ্রামাঞ্চলে পায় ৩৫ লাখ ইউনিট আবাসন ঘাটতি দূর করতে হবে।

তিনি বলেন, “সার্বিকভাবে দেশে দারিদ্র্যের হার কমলেও নগরে দারিদ্র্য সেভাবে কমেনি। বরং ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে শহরাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে ৬০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে দারিদ্র্য বাড়লেও চাকরি, চিকিৎসা, শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলক বেশি থাকায় গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের ঢল থামানো যাচ্ছে না। বরং আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল নগরে পরিণত হবে।”

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গৃহ নির্মাণে স্বল্প সুদে আড়াই থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে ব্র্যাক। পাঁচ বছর মেয়াদে এই ঋণ দেওয়া হচ্ছে।