সমর মজুমদারের ক্যানভাসে বাংলার একাল সেকাল

বাংলার রূপ-রস আর গন্ধে মোহিত শিল্পী সমর মজুমদার মাতৃভূমির প্রতি দায়বদ্ধতায় ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলার লৌকিক ঐতিহ্য-ইতিহাস আর সামাজিক পটপরিবর্তনের গল্প।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2017, 08:07 PM
Updated : 13 Oct 2017, 08:07 PM

তার এই ধরনের ৩০টি চিত্রকর্ম নিয়ে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘মৃত্তিকা মায়া’।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার ক্যাফে-লা-ভেরান্দায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। 

বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প-সমালোচক অধ্যাপক মইনুদ্দীন খালেদ, স্বাগত বক্তব্য দেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস।

প্রদর্শনী নিয়ে শিল্পী সমর মজুমদার বলেন, “আমি নিজেকে চিত্রকর্মের মাধ্যমে প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে প্রকৃত সুখ খুঁজে পাই। ক্যানভাসে আমি আমার ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলতে পারায়  সবচেয়ে স্বতঃস্ফূর্ততা অনুভব করি।”

তার ক্যানভাসে উঠে এসেছে আবহমান গ্রাম বাংলার মানুষ, লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান, জীবনযাত্রার গল্প।

ক্যানভাসে গ্রামবাংলা বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে সমর মজুমদার বলেন, “আমার স্নেহ, অনুরাগ, প্রতিবাদ বা দুঃখের অনুভূতি-সবই বাংলাদেশের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। আমার অন্তঃসম্পর্ক অনেক সাধারণ ও জীবন্ত, যেটা আমি আমার ক্যানভাসে ধারণ করি এবং বিশ্বাস করি এটি দর্শকদের জন্য বোধগম্য হবে।”

প্রদর্শনীটি চলবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধ।

শিল্পকর্মে নারী জাগরণের গল্প

রঙ আর বর্ণের বিচিত্র ব্যবহার, আর অর্থপূর্ণ নানা মোটিফে শিল্পকলার নানা মাধ্যমে নারী জাগরণের জয়গান গাইলেন ১৩ জন নারী চিত্র শিল্পী।

শুক্রবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারি-২ এ শুরু হওয়া ‘কালারস’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।

প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া ১৩ জন শিল্পী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ১৯৮৯-৯০ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাদের এই প্রদর্শনীতে চিত্রকর্মের পাশাপাশি ঠাঁই পেয়েছে মাটি, পাথর ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নানা শিল্পকর্ম, ছিল টেরাকোটা।

প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পী কানিজ সোহানী ইসলাম জানা বলেন, “আদি শক্তি হচ্ছে কালো। আবার ইউরোপে কালো মানে হচ্ছে শোক। চারদিকে নারী ও শিশুর উপর যখন অত্যাচার-নিপীড়ন চলছে, তখন আমরা চিত্রকলায় নারীর মধ্যে সেই আদি শক্তির জাগরণের কথা বলছি।”

রফিকুন নবী বলেন, “সামাজিক সাংসারিক কঠিন বাস্তবতার কারণে খুব কম শিল্পীই শিল্পকলা চর্চায় মন দিতে পারে বা চারুকলার পাঠকে জীবনের অংশ হিসেবে নিতে পারে। প্রদর্শনীর এই শিল্পীরা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই শিল্পকলায় মনোনিবেশ করেছে, নিজেদের মতো করে চর্চাও চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের শিল্পকর্মগুলো মনন-মেধা আর দক্ষতার মিশেলে বড় বৈচিত্র্যময় হয়েছে।”

অ্যাক্রেলিকে ফারহানা আফরোজের ‘ইমপ্রেশন’ সিরিজের চিত্রে রঙের বিচিত্র ব্যবহার ও মিনিমাইজেশনের পাশাপাশি অর্থপূর্ণ মোটিফ তৈরির প্রয়াস দৃশ্যমান হয়ে উঠে। মাধ্যমগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মিশেলে ফারজানা ইসলাম মিল্কির ‘নিসর্গ’ সিরিজে দেখা মিলল বর্ণের বিচিত্র ব্যবহার। কানিজ সোহানী ইসলামের ক্যানভাসে রঙের রৈখিক সঞ্চালন, মণিদীপা দাশগুপ্তের ‘স্বপ্ন’ সিরিজে দেখা মেলে সূক্ষ্মতার। মুক্তি ভৌমিকের ‘পায়রা’ হাজির হয় শান্তির বার্তা নিয়ে।

মুনিরা সুলতানা মুক্তা কাজ করেছেন পোড়ামাটিতে, তিনি তুলে এনেছেন ঝরাপাতার মোটিফকে। নিশাত চৌধুরী জুঁইয়ের পোড়ামাটির ‘ফুল’ সৌরভ হারায়নি, তার ‘ব্যাঙ ও পটারি’ ছিল বিষয়ভাবনায় স্বতন্ত্র।

রেহানা ইসলামের ‘দম্পতি’, ‘ধানভানা’, ‘প্যাঁচা’ গ্রামীণ জীবনের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। রিফাত জাহান কান্তার ‘নারী’ বিচিত্র ভঙ্গিতে বৈশিষ্ট্যময়। সুকন্যা আইনের চিত্রে ‘বাস্তবতা’র বিধ্বংসী রূপটি উঠে আসে রঙের বিচিত্র খেলায়।

‘কালারস’ শিরোনামের প্রদর্শনীটি চলবে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে প্রদর্শনীর দুয়ার।

শিল্পাঙ্গনে ‘ডাইভার্সিটি অ্যান্ড ডুয়ালিটি’

গ্যালারি শিল্পাঙ্গনে শুরু হয়েছে শিল্পী আবদুস শাকুর শাহ ও শিল্পী রণজিৎ দাসের যৌথ প্রদর্শনী ‘ডাইভার্সিটি অ্যান্ড ডুয়ালিটি-২’।

শুক্রবার বিকালে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প সংগ্রাহক মিখাইল আই ইসলাম ও শিল্পাঙ্গন ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন রোকেয়া কাদের।

প্রদর্শনীতে আবদুস শাকুর শাহ ও রণজিৎ দাসের ২৫টি করে মোট ৫০টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে।

ধানমন্ডির ৩০ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির এ গ্যালারিতে প্রদর্শনীটি চলবে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত।