প্রধানমন্ত্রীর অভিমান ভুল ব্যাখ্যায়: প্রধান বিচারপতি

আড়াই মাস ধরে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার পর ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পথে নতুন নাটকীয়তার জন্ম দিয়ে গেছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2017, 05:33 PM
Updated : 13 Oct 2017, 09:08 PM

শুক্রবার রাতে এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন, তবে রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের ‘সমালোচনায়’ বিব্রত।

চলতি মাসের শুরুতে বিচারপতি সিনহার ছুটিতে যাওয়ার খবর আসার পর থেকেই বিএনপি অভিযোগ করে আসছিল, ষোড়শ সংশধনী বাতিলের রায় নিয়ে চাপ দিয়ে তাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করেছে সরকার।

আর ওই অভিযোগ অস্বীকার করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন; এর সঙ্গে রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই, চাপেরও কোনো বিষয় নেই।  

আইনমন্ত্রী বৃহস্পতিবারও বলেছেন, বিচারপতি সিনহা যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই তার ছুটির প্রজ্ঞাপন হয়েছে ।

 

তবে ঢাকার হেয়ার রোডের বাসভবন থেকে বিমানবন্দরের পথে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের হাতে দেওয়া ওই লিখিত বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, রায় নিয়ে সরকারের একটি মহলের ‘ভুল ব্যাখ্যার’ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর ‘অভিমান করেছেন’ বলেই তার বিশ্বাস।

তার অবর্তমানে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পাওয়া বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা শিগগিরই কিছু প্রশাসনিক পরিবর্তন আনবেন বলে যে তথ্য আইনমন্ত্রী দুদিন আগে দিয়েছেন, তা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন বিচারপতি সিনহা। 

তিনি বলেছেন, তেমন কিছু করা হলে তা হবে উচ্চ আদালতে সরকারের ‘হস্তক্ষেপ’; আর তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

সুপ্রিম কোর্টের প্যাডে লেখা টাইপ করা ওই বিবৃতির নিচে সবুজ কালিতে বাংলায় বিচারপতি সিনহার স্বাক্ষরও রয়েছে।

 

আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী ও বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন, যা অচিরেই দূরীভূত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

সেই সাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমি একটু শঙ্কিতও বটে। কারণ গতকাল প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীনতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন।

প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিন মাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটাই হয়ে আসছে।

প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হবে।

এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।

শুক্রবার রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। তার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।

সরকারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ছুটিতে প্রধান বিচারপতির বিদেশে অবস্থানের সময়ে, অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, ‘অথবা তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত’ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার সম্পাদন করবেন।