‘ঘোড়ামারা আজিজের’ যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফের যুক্তিতর্ক

শুনানি শেষে রায়ের পর্যায়ে থাকা গাইবান্ধার সাবেক সাংসদ জামায়াত নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় আসামির যুদ্ধাপরাধ মামলায় নতুন করে যুক্তিতর্ক শুনানির আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2017, 01:17 PM
Updated : 12 Oct 2017, 02:11 PM

বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়।

ট্রাইব্যুনালের নতুন দুই সদস্য বিচারপতি আমির হোসেন ও আবু আহমেদ জমাদারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

পরে প্রসিকিউটর হায়দার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আগামী ২২ অক্টোবর থেকে আবার এ মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হবে।

বিচারিক কাজ শেষে মামলাটি গত ৯ মে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখেছিল বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু গত ১৩ জুলাই বিচারপতি হকের মৃত্যু হলে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম থমকে যায়।

এ অবস্থায় বুধবার বিচারপতি শাহিনুরকে চেয়ারম্যান করে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী ট্রাইব্যুনাল থেকে হাই কোর্টে ফিরে যান। তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে নতুন যুক্ত হন বিচারপতি আমির হোসেন ও আবু আহমেদ জমাদার।

ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হওয়ায় বিচারকরা রায় দেওয়ার আগে আবার যুক্তিতর্ক শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান হায়দার আলী।

মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, আটক, অপহরণ, লুণ্ঠন ও নির্যাতনের তিনটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আজিজসহ এ মামলার ছয় আসামির বিরুদ্ধে।

বাকি আসামিরা হলেন- মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মো. আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)।

অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গতবছর ২৮ জুন এই ছয় আসামির বিচার শুরু করে আদালত। আসামিদের মধ্যে লতিফ ছাড়া সবাই পলাতক।

প্রসিকিউশনের পক্ষে এর আগে যুক্তিতর্কের শুনানি করেছিলেন সায়েদুল হক সুমন ও সৈয়দ হায়দার আলী। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর শেখ মুশফিক কবির।

অন্যদিকে আসামিদের মধ্যে লতিফের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন খন্দকার রেজাউল এবং পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছিলেন।

আজিজসহ গাইবান্ধার এই ছয় জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর। এক বছরের বেশি সময় তদন্তের পর ছয় খণ্ডে ৮৭৮ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা, যাতে ২৫ জনকে সাক্ষী করা হয়।

তদন্ত সংস্থা ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ওই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করলে প্রসিকিউশন শাখা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। এর ওপর শুনানি নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গতবছর জুনে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।

এর আগে ছয় আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হওয়ায় তাদের পলাতক দেখিয়েই এ মামলার কার্যক্রম চলে। 

তদন্ত সংস্থা বলছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর বর্তমান গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান আসামিরা।

প্রথম অভিযোগ:  একাত্তরের ৯ অক্টোবর সকাল ৮টা বা সাড়ে ৮টার সময় আসামিরা পাকিস্তানের দখলদার সেনা বাহিনীর ২৫/৩০ জনকে সঙ্গে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি বাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে চার জন নিরীহ, নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে। পরে তাদের দাড়িয়াপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গনেশ চন্দ্র বর্মণের মাথার সঙ্গে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে এবং বাকিদের ছেড়ে দেয়। আসামিরা আটককৃতদের বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে।

দ্বিতীয় অভিযোগ: ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে আসামিরা সুন্দরগঞ্জ থানার মাঠেরহাট ব্রিজ পাহারারত ছাত্রলীগের নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠেরহাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। পরদিন সকালে আসামিরা বয়েজকে থানা সদরে স্থাপিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিন দিন আটক রেখে নির্যাতনের পর ১৩ অক্টোবর বিকালে তাকে গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটির নিচে চাপা দেওয়া হয়।

তৃতীয় অভিযোগ: একাত্তরের ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর আসামিরা পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগিতায় সুন্দরগঞ্জ থানার পাঁচটি ইউনিয়নে স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে আটক করে। তাদের তিন দিন ধরে নির্যাতন করার পর পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পের কাছে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং লাশ মাটি চাপা দেয়। সেখানে ওই শহীদদের স্মরণে একটি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।