রোহিঙ্গা সঙ্কট দীর্ঘ হলে জঙ্গিবাদ জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

রোহিঙ্গা সঙ্কট দীর্ঘ হলে এ অঞ্চলে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ ছড়িয়ে পারতে বলে শঙ্কার কথা উঠে এসেছে এ বিষয়ের এক গোলটেবিল আলোচনায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2017, 10:04 AM
Updated : 12 Oct 2017, 11:46 AM

বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ওই আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কটের উদ্বেগের কথা জানান বিভিন্ন বক্তা।

আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ নানা অপরাধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারে। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হল যে, চরমভাবে নিগৃহীত ও ক্ষুব্ধ এ জনগোষ্ঠীকে স্বার্থান্বেষী মহল উগ্রবাদের পথে প্ররোচিত করতে পারে, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো রিজিয়নকেই অস্থিতিশীল করতে পারে।

“এর চরম মাশুল মিয়ানমারসহ সবাইকেই দিতে হবে। এ সত্ত্বেও এ সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমাদেরকে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ নিতে হবে।”

রোহিঙ্গা সমস্যা শিগগির সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ হওয়ার কথা তুলে ধরে এর ফলে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন আলী ইমাম মজুমদার।

তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের বিভিন্ন ঘটনাবলির কারণে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি অন্যদিকে সরে যেতে পারে। বাংলাদেশের পক্ষে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর চাপ সহ্য করা দুরূহ হবে। ভয়াবহ নিরাপত্তাজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

“এই বিরাট উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আবদ্ধ করে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। ফলে তারা জীবন-জীবিকা নির্বাহের প্রচেষ্টায় স্থানীয়দের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, এমনকি দ্বন্দ্বেও জড়িয়ে পড়তে পারে।”

বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন সুজনের এই নির্বাহী সদস্য।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বিভিন্ন পক্ষের একই রকম বক্তব্যের কারণে তাদের অবস্থান একইদিকে আছে উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে সবদলের ঐক্যমতের ফোরাম গড়ে তোলারও পরামর্শ আসে গোলটেবিল আলোচনা থেকে।

অনুষ্ঠানে সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “রোহিঙ্গা সঙ্কটে সব দল নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। এক্ষেত্রে জাতির ঐক্যমত দরকার। যেটা হলে এ সমস্যাকে দীর্ঘ মেয়াদী হলেও সমাধানের দিকে নিয়ে যাওয়া যাবে।”

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে জাতীয় ঐক্য দরকার, সেটা কিন্তু আছে; সবাই প্রায় একই রকমের কথা বলছে। দৃশ্যমান প্ল্যাটফর্ম হয়ত নাই। সেটা করার প্রসঙ্গে এখানে বক্তব্য এসেছে।”

সভাপতির বক্তব্যে সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার সেভাবে কাজ করতে পারেনি। সরকারের হোমওয়ার্কও সেভাবে ছিল না। আর সরকারের হোমওয়ার্ক থাকলেও সেটা সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাদের জানা উচিত।”

সরকারের কোনো মুখপাত্র না থাকায় কোনটা সরকারি বক্তব্য সেটা বোঝা দুষ্কর হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থান বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। তবে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে এবং তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সেটা সেভাবে কাজে আসেনি।”

রোহিঙ্গা সমস্যায় সমর্থন আদায়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়োজনে চীন, রাশিয়া ও ভারতে সফর করতে পারেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন বলেন, “রাখাইন রাজ্যকে খালি করার স্বার্থে তারা রোহিঙ্গা নির্যাতন চালাচ্ছে। কারণ খালি করতে পারলে বিনিয়োগ আসবে। বিভিন্ন দেশ তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে। সেটা বিক্রি বন্ধের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।”

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, রামসুর পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার, সমাজকর্মী রেহানা সিদ্দিকী বক্তব্য দেন।