প্রধান বিচারপতি ‘না ফেরা পর্যন্ত’ দায়িত্বে ওয়াহহাব মিঞা

প্রধান বিচারপতির সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2017, 07:31 AM
Updated : 12 Oct 2017, 01:34 PM

ছুটিতে থাকা বিচারপতি সিনহা আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে যে চিঠি দিয়েছিলেন, তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের স্বাক্ষরের পর বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয় এই আদেশ জারি করে।  

আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির আবেদনে এর আগে ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিনের ছুটি মঞ্জুর করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু বিচারপতি সিনহা যেহেতু আরও বেশি দিন বিদেশে থাকবেন, সেহেতু রাষ্ট্রপতি নতুন আদেশ দিয়েছেন।   

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্ধিত ছুটিতে প্রধান বিচারপতির বিদেশে অবস্থানের সময়ে, অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, অথবা তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার সম্পাদন করবেন।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে থাকা প্রধান বিচারপতির হঠাৎ ছুটিতে যাওয়া নিয়ে চলতি মাসের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা চলছে।

বিএনপি অভিযোগ করেছে, রায়ের কারণে ‘চাপ দিয়ে’ প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে । অন্যদিকে সরকার বলছে, এর সঙ্গে রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই, চাপেরও কোনো বিষয় নেই।

২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।  সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরুর আগে গত ২৪ অগাস্ট তিনি শেষ অফিস করেন এবং অবকাশ শেষে ৩ অক্টোবর আদালত খোলার দিন থেকে ছুটিতে যান।

রাষ্ট্রপতি বরাবরে  প্রধান বিচারপতির পাঠানো সেই ছুটির আবেদন সাংবাদিকদেরও দেখান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেখানে বলা ছিল, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে এর আগে তিনি দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং গত বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। বিশ্রামের জন্য ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন তিনি ছুটি কাটাতে চান।

সুপ্রিম কোর্ট

এর মধ্যে গত ৭ অক্টোবর বিচারপতি সিনহার অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাওয়ার খবর আসে। আদালতের একটি সূত্র সেদিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানায়, প্রধান বিচারপতি ও তার স্ত্রী সুষমা সিনহা তিন বছরের ভিসা পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে বড় মেয়ে সূচনা সিনহার কাছে উঠবেন তারা।

এরপর বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা রাষ্ট্রপতিকে জানিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন বিচারপতি সিনহা। আইন সচিব সেদিন জানান, ১৩ অক্টোবরে থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকার ইচ্ছার কথা ওই চিঠিতে রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার জানান, প্রধান বিচারপতির ওই চিঠি পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে সই করেছেন। পরে রাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও ওই চিঠিতে সই করেন।

প্রধান বিচারপতির ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই বুধবার বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে দেখা করেন আইনমন্ত্রী।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জুডিশিয়াল কনফারেন্স নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির মতামত নিতে এসেছিলেন তিনি। তাছাড়া কিছু প্রশাসনিক পরিবর্তনের বিষয়েও বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা আলোচনা করেছেন। 

সরকারের সর্বশেষ আদেশ অনুযায়ী বিচারপতি সিনহা ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকতে চান। সেক্ষেত্রে ২ ডিসেম্বর যখন জুডিশিয়াল কনফারেন্স হবে, তখন বিচারপতি সিনহার দেশেই থাকার কথা।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানেরর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এই ছুটিতে বিচারপতি সিনহা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যাবেন। সর্বশেষ চিঠিতে তার ব্যক্তিগত সহকারী সেটাই জানিয়েছেন।

“আগামীকাল ১৩ অক্টোবর তিনি দেশতাগ করতে চান এবং ১০ নভেম্বর দেশে ফিরে আসবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।”