১১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

অভিবাসন নীতি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বসবাস ও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শতাধিক অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে রয়েছে ১১ বাংলাদেশিও।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2017, 07:13 AM
Updated : 12 Oct 2017, 07:13 AM

ওই ১১ বাংলাদেশিসহ শতাধিক অভিবাসী নিয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের বিশেষ বিমান স্থানীয় সময় বুধবার ভোররাতে দক্ষিণ এশিয়ার উদ্দেশে উড়াল দেয়।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইস) মিডিয়া দপ্তর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

তারা বলছে, এটি প্রচলিত কার্যক্রমেরই একটি অংশ। একদিকে অভিবাসনের আইন লঙ্ঘন, অপরদিকে নানাবিধ অপকর্মে লিপ্তদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের যে কার্যক্রম চলছে, তারই ধারাবাহিকতায় এদের গ্রেপ্তার করে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ওই ১১ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর তাদের মুক্তির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও কংগ্রেসে আবেদন করেছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রধান মাজেদা উদ্দিন।

এই বাংলাদেশিরা কোনো ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল না জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সামাজিক ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে শুধুমাত্র গুরুতর অপরাধীদের ধরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

“অথচ এই ১১ বাংলাদেশির একজনও কোনো ধরনের অপরাধে লিপ্ত ছিলেন না। তাদের অপরাধ একটাই, আর তা হচ্ছে অভিবাসনের মর্যাদা পাননি। তারা সকলেই ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা দোকানের বিক্রেতা অথবা ট্যাক্সি চালিয়ে দিনাতিপাত করছিলেন।”

ফেরত পাঠানো ১১ বাংলাদেশির মধ্যে কুষ্টিয়ার মোজাম্মেল হক এবং তার স্ত্রী নাসরীন সুলতানা রয়েছেন।

মাজেদা উদ্দিন জানান, ব্রুকলিনের কোনি আইল্যান্ডে রেস্তোরাঁয় কর্মরত অবস্থায় মোজাম্মেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় একই রেস্তোরাঁয় কাজ করা তার স্ত্রী বাধা দিয়ে ফেঁসে গেছেন; কারণ তিনিও অবৈধভাবে এদেশে বাস করছিলেন।

এ দম্পতির তিনটি শিশু সন্তান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের সবার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। মা-বাবার অনুপস্থিতিতে এই শিশুদের কী হবে, সেটি তুলে ধরে মানবিক কারণে তাদের মুক্তি দিতে সিনেট ও কংগ্রেসে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।”

এ বছর দৈনিক গড়ে প্রায় ৪০০ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের তথ্য; এ সংখ্যা গত বছরের চেয়ে তা ৪০ শতাংশ বেশি।

সেপ্টেম্বরের শেষ চারদিনেও নিউ ইয়র্ক সিটি ও বিভিন্ন শহরে অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশসহ ৪২ দেশের ৪৮৯ অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে আইস এজেন্টরা।

আইস কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার এই অভিবাসীরা ইমিগ্রেশনের আইন লঙ্ঘন করে বসবাস করার পাশাপাশি অনেকে নানা অপকর্মেও জড়িত ছিল।

ওই অভিযানে নিউ ইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়া, জ্যাকসন হাইটস ও ব্রুকলিন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত নয় বাংলাদেশি।

আইস জানায়, গ্রেপ্তার বাংলাদেশিদের একজন গুরুতর অপরাধ করে জেল খেটেছেন। মানুষজনকে হয়রানি ও হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি।

একদিকে অভিবাসী মর্যাদা নেই, অন্যদিকে সামাজিক অস্থিরতার জন্যে অভিযুক্ত হওয়ায় ওই ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

গত মাসের শেষ সপ্তাহের ওই অভিযানে গ্রেপ্তার ৪৮৯ জনের মধ্যে ৩১৭ জন গুরুতর অপরাধে জেল খেটেছে, ৬৮ জনের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের আদেশ রয়েছে, ১০৪ জন বহিষ্কারের পর ফের বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছিলেন। এছাড়া ১৮ জন চিহ্নিত একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য ছিল বলে জানিয়েছে ইমিগ্রেশন দপ্তর।

এদিকে এই গ্রেপ্তার অভিযান নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। যদিও যারা কোনো অপরাধে জড়িত নন বা ছিলেন না, তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ধরনের অভিযানের প্রেক্ষাপটে সবাইকে পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাদের পরিচয়পত্র নেই, তারা যেন এমন কিছু সঙ্গে রাখেন, যা দিয়ে গ্রেপ্তার এড়ানো যায়; বিশেষ করে যাদের অভিবাসী মর্যাদার ‘এডজাস্টমেন্ট’ অথবা অন্য কোনো কর্মসূচিতে আবেদন ঝুলে রয়েছে, তারা যেন এটর্নির পরামর্শ অনুযায়ী চলাচল করেন।

এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড রিমুভাল অপারেশনের নিউ ইয়র্ক ফিল্ড অফিসের পরিচালক থমাস আর ডেকার বলেন, জনগণের নিরাপত্তাকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সে কারণে সব ধরনের অপরাধীকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, ইমিগ্রেশনের ঐতিহ্য রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের, এজন্য আমরা সবাই গর্ববোধ করি। একইসঙ্গে আমরা আইনের শাসনের ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছি। তাই যারা যুক্তরাষ্ট্রে এসে অপরাধ করছে, সমাজ ও জীবনকে ঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের রেহাই দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।