বুধবার সংসদ ভবনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য মাহজাবিন খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তিনটি এনজিওকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। তারা অন্য কোনো কারণে সেখানে কাজ করছিল বলে মনে হয়েছে।”
তিনি জানান, এনজিও হিসেবে কাজ করতে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে অনুমতি নেওয়ার কথা থাকলেও তা তারা নেয়নি।
“অনেকে পারমিশন না নিয়ে সরাসরি চলে যাচ্ছে। সেগুলোও বন্ধ করতে বলা হয়েছে।”
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মুসলিম এইড বাংলাদেশ, ইসলামিক রিলিফ এবং আল্লামা ফয়লুল্লাহ ফাউন্ডেশনকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ কাজ চালাতে মানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনজিও ব্যুরোর পরিচালক (নিবন্ধন ও অডিট) শাহাদাৎ হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে মুসলিম এইডের ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে গত মাসে।
তবে কোন অভিযোগে তাদের সেখানে কাজ করতে মানা করা হয়েছে- সে প্রশ্নে কোনো তথ্য দেননি এনজিও ব্যুরোর পরিচালক।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মুসলিম এইডের কার্যালয়ে ফোন করা হলেও কেউ ধরেননি। চট্টগ্রামে ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ের যে ফোন নম্বর তাদের ফেইসবুক পেইজে দেওয়া আছে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের কোঅর্ডিনেটর (মিডিয়া) শফিউল আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য আমরা অনুমতি চেয়েছি। অফিসিয়ালি আমরা এখনও কোনো জবাব পাইনি।”
কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কার্যক্রমে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর ফোকাল পয়েন্ট মো. শাহ আলম বলেন, ওই তিন এনজিও সম্পর্কে তাদের কাছে হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওই তিনটি এনজিওর বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের মত রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। আর গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশে এসেছে আরও পাঁচ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি সমন্বয়ে বর্তমানে সেনাবাহিনী কাজ করছে।
২০১২ সালে মিয়ানমারে সহিংসতার সময় বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ কাজ চালাতে তিনটি এনজিওকে সরকার থেকে মানা করা হয়। সেই তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো- অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গার, মুসলিম এইড-ইউকে এবং মেদসা সঁ ফ্রতিয়ে-এমএসএফ।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে বৈঠকে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে মিয়নমারের ওপর চাপ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া দেশের জনগণকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ‘স্বচ্ছ ধারণা দিতে’ পাঠ্যপুস্তকে একটি অধ্যায় সংযোজন করতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
আসন্ন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনসহ (সিপিএ) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যেসব প্রতিনিধি যোগ দেবেন তারা যাতে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উত্থাপন করতে পারেন সে লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংক্ষিপ্তসার সরবরাহ করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটির সভাপতি দীপু মনির সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মুহাম্মদ ফারুক খান, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স এবং মাহজাবিন খালেদ অংশ নেন।