প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা, আর একটি অসুস্থ শিশুর পথ আটকে যাওয়া

উত্তরার মা ও শিশু হাসপাতাল থেকে নয় দিন বয়সী অসুস্থ শিশুকে ঢাকার শিশু হাসপাতালে নিতে শ্যামলী রওনা হয়েছিলেন মাসুদুর রহমান শ্যামল।

ওবায়দুর মাসুমও রিফাত রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2017, 04:53 AM
Updated : 7 Oct 2017, 10:38 AM

শনিবার সকালে বিমানবন্দর থেকে উত্তরামুখী সড়কের পূর্ব পাশে যানজট দেখে উল্টোপথে সড়কের পশ্চিম পাশ দিয়ে আসছিল অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু ১০টা ১০ মিনিটে বিমানবন্দর গোল চত্বরে এলে পুলিশ ব্যারিকেড আটকে যায় তা।

ঠিক ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সফর থেকে ফিরে শাহজালাল বিমানবন্দরে ছিলেন; তাকে সংর্বধনা দিতে পথে পথে অবস্থান নিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসার আগে সকাল ১০টা থেকেই বিমানবন্দর গোল চত্বরে সড়কে আটকে দেয় পুলিশ; ফলে উত্তরা থেকে কোনো গাড়ি নগরীর দিকে আসতে পারছিল না।

অ্যাম্বুলেন্সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত নয় দিন বয়সী শিশু থাকার কথা জানিয়ে গাড়িটি ছেড়ে দিতে পুলিশের কাছে অনুরোধ জানান শ্যামল।

কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে তারা বলেন, সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর বের হবে। এর আগে কোনো গাড়ি ছাড়া যাবে না। 

তবে অ্যাম্বুলেন্সটিকে অপেক্ষমাণ সব গাড়ির আগে নিয়ে রাখতে সহযোগিতা করেন সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা।

প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর বিমানবন্দর ছেড়ে গেলে ১০টা ৪০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্সটি ছেড়ে দেওয়া হয়।

তার আগে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আটকে থাকায় শ্যামল বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়ায় নিজের ক্ষোভের কথা জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাই, উত্তরার দুইটা হাসপাতালে নিছি। তারা কেউ রাখে নাই। বলছে শিশু হাসপাতালে নিয়া যাইতে। এখন বাচ্চা বাঁচে কি না, নিশ্চয়তা নাই। এরমধ্যে আটকাইয়া দিল।

“কেউ মইরা যায়, আর হেরা সংবর্ধনা দেয়!”

প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় ওই পথ আটকে দেওয়া হলেও শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সময় জনদুর্ভোগ এড়িয়ে কর্মসূচি ঠিক করতে দেখা গেছে।

কোনো ধরনের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করেই এবারের সংবর্ধনা দেওয়ার আশ্বাস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দিলেও তার প্রতিফলন মাঠে দেখা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর বিমানবন্দরের সামনের সড়কটি খুলে দেওয়া হলেও রাস্তার উপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবস্থানের কারণে আরও কিছু সময় গাড়ি চলাচল করতে সমস্যা হচ্ছিল।

জাতিসংঘ থেকে ফেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবর্ধনার কারণে গণভবন পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে দেওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে।

উত্তরাবাসীকে গাড়িতে আটকা পড়ে থাকতে হয়, একই সময়ে খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্ব রোড, কাওলা, বনানী এলাকায় মানুষকে গাড়ির অপেক্ষায় থাকতে হয় দাঁড়িয়ে।

বিমানবন্দরের সামনে আটকে পড়া তানজির আরেফিন নামে এক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে, ভালো কথা। কিন্তু সেটা নির্দিষ্ট একটা জায়গায় দিলে আমাদের ভোগান্তি হয় না।”

গণপরিবহন না পেয়ে পায়ে হেঁটে কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। সেতু ভবনের কাছ থেকে ছবিটি তুলেছেন ওবায়দুর মাসুম/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সকাল সোয়া ৯টা থেকে মহাখালীতে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

সোয়া ১০টা পর্যন্ত উত্তরামুখী সড়কটি খোলা থাকলেও এরপর দুই পাশের সড়কই আটকে দেওয়া হয়।

এই সময়ে টাঙ্গাইল যাওয়ার জন্য অপেক্ষারত আব্দুল জব্বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। কোনো গাড়ি আসছে না।”

উত্তরা যেতে মহাখালীর আমতলী এলাকায় বাসের অপেক্ষারত সায়মা বেগম বেলা সাড়ে ১০টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কোনো গাড়ি পাচ্ছিলেন তা তিনি।

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে এই নারী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেবে ভালো কথা, তাই বলে জনগণের ভোগান্তি করে কেন?”

বাস না পেয়ে কাপড়ের বোঝা মাথায় নিয়ে মহাখালী থেকে হেঁটেই গুলিস্তানের দিকে রওনা হওয়া ব্যবসায়ী শওকত হোসেন বলেন, “আমাগো অসুবিধা কেউ দেখে না। আমাদের কাজ করে খেতে হয়, আমাদের খুব সমস্যা।” 

সংবর্ধনার মধ্যে গণভবনের পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর পৌনে ১১টার দিকে যখন বনানী-মহাখালী অতিক্রম করছিলেন, তখন বিজয় সরণি পর্যন্ত সড়কের দুই পাশই ছিল পুরো ফাঁকা।

বিজয় সরণি সিগনালে বেলা ১০টা ২০ মিনিট থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০টা ৫০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর অতিক্রমের পর ওই সড়ক খুলে দেওয়া হলেও যানজট ততক্ষণে ফার্মগেইট, শাহবাগ ছাড়িয়ে যায়।

ফার্মগেইটে বাসের অপেক্ষায় থেকে তা না পেয়ে অটোরিকশায় চেপে গ্রিনরোডের বাসিন্দা সাইমন বলেন, “আমাদের তো আর শনিবার ছুটি নেই, অফিসে সময় মতোই পৌঁছাতে হবে। ডাবল ভাড়া দিয়ে সিএনজি নিলাম।”

“সড়কে সংবর্ধনা না দিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে দিলে এই দুর্ভোগ পোহাতে হত না,” মন্তব্য করেন তিনি।

রোহিঙ্গা সঙ্কটে সাহসী সিদ্ধান্ত ও উদার মনের পরিচয় দেওয়ায় শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

দলীয় কর্মসূচি অনুসারে আগে থেকে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত এই পুরোটা পথের দুই পাশে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দলীয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান তারা।

এই নেতা-কর্মীরা বাস, ট্রাক, পিকআপভ্যানে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছিলেন। তাদের রাখা গাড়ির কারণে  যেমন যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে, আকার কর্মসূচি শেষে সড়কে মিছিল করে তাদের যাওয়াও যানজট বাড়িয়ে তোলে।