মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারকের আপিল বেঞ্চের বিচারিক কর্যক্রম শুরুর পর তা ১০টা পর্যন্ত চলে।
বেঞ্চের অপর বিচারকরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
এদিকে বেলা সোয়া ২টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে ফুল কোর্ট সভা ডাকা হয়েছে। হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারকদের সবাই ওই সভায় উপস্থিত থাকবেন বলে ডেপুটি রেজিস্ট্রারের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরুর আগে গত ২৪ অগাস্ট শেষ অফিস করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
অবকাশের মধ্যেই গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি দুই সপ্তাহের জন্য বিদেশ সফরে গেলে তার অবর্তমানে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক হিসেবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি যতদূর জানি, উনি আগামীকাল থেকে ছুটিতে যাবেন।”
পরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপণে বলা হয়, “মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহার শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে আগামী ৩ অক্টোবর হতে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ৩০ দিন ছুটি মঞ্জুরের বিষয়ে সানুগ্রহ অনুমোদন প্রদান করেছেন এবং মাননীয় প্রধান বিচারপতি অসুস্থতাজনিত ছুটি ভোগকালীন সময়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারক মাননীয় বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করিয়াছেন।”
সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা তার অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্রমত অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি ওই কার্যভার পালন করবেন।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। কয়েক মাস আগে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেওয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে রয়েছেন তিনি।
অবকাশ শেষে সুপ্রিম কোর্ট খুললে বিচারপতি সিনহার অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের। তার আগেই প্রধান বিচারপতির ছুটিতে যাওয়ার খবর আসে।
বিচারপতিদের অসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের এই সংশোধন এনেছিল বর্তমান সরকার। হাই কোর্ট ওই সংশোধন বাতিলের পর আপিল বিভাগও একই রায় দেয়।
ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সংসদ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে খাটো করেছেন বলে অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সংসদ সদস্যরা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন কেউ কেউ।
অন্যদিকে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার এই রায়কে স্বাগত জানায় বিএনপি।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়।
ওই প্রস্তাব পাসের আগে সংসদে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সংসদে আনা সংবিধান সংশোধন বাতিলের এই রায় দিয়েছে।
‘সংসদ ও গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে’ এই রায় দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সরকার প্রধান।
পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করায় নতুন করে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে পরে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি বলেন, তাকে ‘মিসকোট’ করে প্রকাশিত বক্তব্যের কারণে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ষোড়শ সংশোধন বাতিলের ওই রায়কে ‘ভ্রমাত্মক’ বলেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এতে তারা ‘কামিয়াব’ হবেন বলে আশা করছেন।