এক মাসের ছুটিতে যাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি: অ্যাটর্নি জেনারেল

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিলের রায় নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা এক মাসের ‍ছুটিতে যাচ্ছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2017, 10:18 AM
Updated : 3 Oct 2017, 02:58 AM

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

এক মাসের অবকাশ শেষে সুপ্রিম কোর্ট খুলবে মঙ্গলবার। খোলার পরই বিচারপতি সিনহাকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি রয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের।

তার আগেই মঙ্গলবার থেকে ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে বিচারপতি সিনহার আবেদনের কথাটি প্রকাশ পেল।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমি যতদূর জানি, উনি (বিচারপতি সিনহা) আগামীকাল থেকে ছুটিতে যাবেন।”

বিষয়টি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন কিছু বলতে চাননি।

বিচারপতি সিনহা ছুটিতে গেলে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক হিসেবে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা।

বিচারপতি সিনহার চাকরির আরও চার মাস বাকি আছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে তার চাকরির মেয়াদ।

২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি সিনহা এই বছর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেওয়ার পর থেকে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে।

বিচারপতিদের অসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের এই সংশোধন এনেছিল বর্তমান সরকার। হাই কোর্ট ওই সংশোধন বাতিলের পর আপিল বিভাগও একই রায় দেয়।

ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সংসদ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে খাটো করেছেন বলে অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সংসদ সদস্যরা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তোলেন কেউ কেউ।

অন্যদিকে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার এই রায়কে স্বাগত জানায় বিএনপি।

বিচারপতি এস কে সিনহার অপসারণ দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা (ফাইল ছবি)

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং তার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়।

ওই প্রস্তাব পাসের আগে সংসদে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সংসদে আনা সংবিধান সংশোধন বাতিলের এই রায় দিয়েছে। 

‘সংসদ ও গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে’ এই রায় দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সরকার প্রধান।

রায় নিয়ে সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা আদালতে শুনানিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করে সে সেদেশের সুপ্রিম কোর্টের রায় দেওয়ার পরের পরিস্থিতির দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, বিচার বিভাগ যথেষ্ট ধৈর্য ধরেছে।

পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করায় নতুন করে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে পরে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি বলেন, তাকে ‘মিসকোট’ করে প্রকাশিত বক্তব্যের কারণে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

ষোড়শ সংশোধন বাতিলের ওই রায় ‘ভ্রমাত্মক’ বলে প্রতিক্রিয়া এসেছে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের কাছ থেকে।

সুপ্রিম কোর্টের এই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আশা প্রকাশ করেছেন, এতে তারা ‘কামিয়াব’ হবেন।