প্রবাসীদের ভোটাধিকার ‘জটিল ব্যাপার’

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার দিতে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য থাকলেও বিষয়টি সহজ বলে মনে করছেন না নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2017, 05:09 AM
Updated : 28 Sept 2017, 10:23 AM

প্রবাসীদের ভোটার করতে আইন সংশোধন করা হলেও সাত বছরে এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপও নেই সাংবিধানিক সংস্থাটির।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিদেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার করা এবং তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করার কাজটি খুবই জটিল। দলগুলো কমিশনে এসে প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কারিগরি ও বাস্তবতা বিবেচনায় আপাতত তা করা কঠিন।”

বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ১৮ লাখের বেশি। আর প্রবাসে থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা মোটামুটি কোটির ঘরে।

২০১০ সালে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করে বলা হয়, কোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে বসবাস করলে তিনি দেশে সর্বশেষ যে নির্বাচনী এলাকা বা ভোটার এলাকায় বসবাস করেছেন, অথবা তার নিজের বা পৈত্রিক বসতবাড়ি যেখানে ছিল বা রয়েছে; তিনি সেই এলাকার অধিবাসী বলে গণ্য হবেন।

২০০৮ সালে প্রথমবারের মত ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর পর তৎকালীন এটিএম শামসুল হুদা কমিশন প্রবাসীদের ভোটার ও ভোটাধিকার নিয়ে উদ্যোগী হয়। দুই নির্বাচন কমিশনার তখন এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিদেশ সফরও করেন।

এর ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ সরকার ২০১০ সালে ভোটার তালিকা আইনে সংশোধন আনে, যার লক্ষ্য ছিল বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় এনে তাদের ভোট দেওয়ার পথ তৈরি করা।

তখনকার নির্বাচন কমিশন বলেছিল, প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় নিবন্ধন এবং সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থান করেই তাদের ভোট দেওয়ার পদ্ধতি কী হবে- তা বিধিমালায় যুক্ত করা হবে। কোন পদ্ধতিতে কীভাবে তারা ভোটার হবেন- তাও থাকবে বিধিমালায়। প্রবাসীরা ইচ্ছা করলেই ভোটার হতে পারবেন, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়।

আইন সংশোধনের পর সাত বছর পার হতে চলেছে; শামসুল হুদার পর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশন মেয়াদ পূর্ণ করে চলতি বছর দায়িত্ব নিয়েছে কে এম নূরুল হুদার কমিশন। কিন্তু প্রবাসীদের ভোটার করার পদ্ধতি ও তাদের ভোটদান পদ্ধতি নিয়ে সেই বিধিমালা করার উদ্যোগ আর নেওয়া হয়নি।

নূরুল হুদার ইসি রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে যে সংলাপের আয়োজন করেছে, তাতে এ পর্যন্ত অংশ নিয়েছে ১৮টি দল, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। এই সংলাপে প্রবাসীদের ভোটার করার তাগিদ এসেছে অনেকের কাছ থেকেই।

এর আগে পরিকল্পনা পর্যায়ে ইসির কাছে প্রস্তাব এসেছিল, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কমিশন ভোটার আবেদন ফরম পাঠাবে। দূতাবাস থেকে সে দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা ফরম সংগ্রহ করে তা পূরণ করে আবার দূতাবাসেই জমা দেবে। এরপর দূতাবাস বাংলাদেশে তাদের স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী জেলাভিত্তিক প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে পাঠাবে ইসির কাছে। ইসি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে তা যাচাই-বাছাই করবে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, আইন সংশোধন হলেও প্রয়োজনীয় বিধিমালা করার কাজটি এখনও এগোয়নি। প্রবাসীদের কীভাবে ভোটার করা হবে তা নিয়েও ভাবতে হবে। কয়েকটি দেশের দূতাবাসে পাসপোর্ট করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু একই কায়দায় জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া কঠিন।

পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি দূতাবাসে এনআইডি দেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে দেখা যেতে পারে বলে মনে করলেও সহসা তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া যাবে কিনা- সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন নির্বাচন কমিশনের এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ভোটারদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য সব ডেটা দেশে এনে তথ্যভাণ্ডারে যাচাই করতে হবে। তারপর ভোট দেওয়ার প্রসঙ্গ আসবে। ৩০০ আসনের ব্যালট পেপার, প্রয়োজনীয় ব্যালট বাক্সসহ নানা কারিগরি ও সামগ্রী প্রতিটি দেশে সরবরাহ প্রায় অসম্ভব। প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশই প্রবাসীদের ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি।

তবে প্রবাসীরা দেশে ফিরলে যাতে দ্রুত ভোটার তালিকাভুক্ত করে জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হয়, সে বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মোখলেসুর রহমান।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা গত ২২ অগাস্ট গাজীপুরের কাপাসিয়ায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রবাসী যারা দেশে আসবেন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে ‘বিশেষ নির্দেশনা’ দেবেন তিনি। 

“যারা বিদেশে থাকেন, তারা যদি দেশে আসেন, ভোটার হতে চান, তাদের প্রাধান্য দিয়ে দেশে থাকতে থাকতে তাদের হাতে এনআইডি কার্ড তুলে দেওয়ার জন্য বিশেষ আদেশ দেওয়া হবে।”