তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, মূলত তার ভিত্তিতেই নিরাপত্তা পরিষদের বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হবে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে এই আলোচনায় বসছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সেখানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি তাদের সামনে তুলে ধরবেন।
ওই বৈঠকের আগে বুধবার ঢাকায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য না হলেও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সেখানে সরকারের বক্তব্য তুলে ধরবেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক থেকে বাংলাদেশ কী প্রত্যাশা করছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এমন একটি ব্যবস্থা করা হোক, যাতে রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে।”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী নতুন করে অভিযান শুরুর পর গত ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত চার লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। জাতিসংঘ রাখাইনের ওই সেনা অভিযানকে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে।
গত কয়েক দশক ধরে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ বলে আসছে, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের জায়গা দেওয়া হলেও মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো তুলে ধরে এর নিরসনে পাঁচ দফা প্রস্তাব বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনার প্রস্তাব >> অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা >> অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা >> জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা >> রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা >> কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা |
মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিক এবারের মানতে নারাজ মিয়ানমারে সরকার এদের ফেরত নিতে অনীহা দেখিয়ে আসছিল। তবে এবারের সহিংসতায় সমালোচনার মুখে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি যাচাই সাপেক্ষে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গাদের নাগরিক পরিচয় কীভাবে যাচাই হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। সু চি বলেছেন, ১৯৯২ সালে দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী যে নীতিতে যাচাই হয়েছিল, এবারও তার ভিত্তিতেই হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বেই পরিচয় যাচাইয়ের কাজটি করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য মিয়ানমারের মিনিস্টার অব দি অফিস ও স্টেট কাউন্সেলর কিও তিন্ত সোয়ের আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর এর আগে দুই দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিল নিরাপত্তা পরিষদ। গত সপ্তাহে রাখাইন পরিস্থিতির নিন্দা এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে একটি অনানুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল।
কূটনীতিকরা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার বিষয়ে ভাববে নিরাপত্তা পরিষদ। তবে মিয়ানমারের মিত্র চীন ও রাশিয়া এ বিষয়ে জোরালো কোনো প্রস্তাব গ্রহণের বিরোধিতা করতে পারে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমার সরকারের সমালোচনায় সোচ্চার হলেও তাদের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে আসছে চীন ও রাশিয়া।
নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব পাস করতে ১৫ সদস্য দেশের মধ্যে অন্তত নয় দেশের সমর্থনের পাশাপাশি পাঁচ স্থায়ী সদস্য চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের অনাপত্তি দরকার হয়।
বর্তমানে মিশর, ইতালি, জাপান, সুইডেন, বলিভিয়া, ইথিওপিয়া, কাজাখস্তান, সেনেগাল, ইউক্রেইন ও উরুগুয়ে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য।