রোহিঙ্গাদের যাচাই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে চায় বাংলাদেশ

শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

নুরুল ইসলাম হাসিব জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2017, 07:39 PM
Updated : 26 Sept 2017, 07:40 PM

জাতিসংঘ মহাসচিবের আন্তোনিও গুতেরেসের নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিফিংয়ের আগে পরিষদের সদস্য দেশগুলোর ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের কাছে পরিস্থিতি তুলে ধরবে বাংলাদেশ সরকার।

রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে গত এক মাসে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আসা ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গাও রয়েছে বাংলাদেশে।

মুসলিম রোহিঙ্গাদের নাগরিক এবারের মানতে নারাজ মিয়ানমারে সরকার এদের ফেরত নিতে অনীহা দেখিয়ে আসছিল। তবে এবারের সহিংসতায় সমালোচনার মুখে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি যাচাই সাপেক্ষে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গাদের নাগরিক পরিচয় কীভাবে যাচাই হবে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোযেন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা জাতিসংঘের নেতৃত্বে তা যাচাইয়ের প্রস্তাব তুলছি।”

অং সান সু চি

সু চি বলেছেন, ১৯৯২ সালে যে নীতির ভিত্তিতে যাচাই হয়েছিল, এবারও তার ভিত্তিতেই হবে।

তখন দ্বিপক্ষীয় সমঝোতায় প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিয়েছিল মিয়ানমার।

ওই সময়কার সমঝোতা পত্রে দেখা যায়, যে সব রোহিঙ্গার কাছে নাগরিক পরিচয়পত্র কিংবা জাতীয় নিবন্ধন সনদ কিংবা নাগরিকত্ব প্রমাণে কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষের কোনো দলিল ছিল, তাদের ফেরত নিতে রাজি হয় মিয়ানমার।

তবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ঘুরে আসা একজন কূটনীতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কোনো প্রমাণ রোহিঙ্গাদের কাছে থাকবে, সেটা ভাবা ঠিক হবে না।

“কারণ তারা বাঁচার জন্য পালিয়ে এসেছে। এই সময় নিজেদের জীবন বাঁচানো ছাড়া আর কিছু ভাবার ছিল না তাদের।”

এছাড়া রোহিঙ্গারা যে সব পরিচয়পত্র ব্যবহার করত, এক বছর আগে মিয়ারমার সরকারের তা বাতিলের কথাও বলেন ওই কূটনীতিক।

বাড়িতে আগুন দেওয়ার প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছেন সেতারা বেগম; তবে মন পড়ে আছে রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার সারাপাড়ার বাড়িতে- ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

রোহিঙ্গা সঙ্কটের মধ্যে মিয়ানমারের মিনিস্টার অব দি অফিস ও স্টেট কাউন্সেলর কিও তিন্ত সোয়ে আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন।

দিনটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সফরের সময় তাকে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখার প্রস্তাব দেওয়া হবে।

রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানকে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের প্রয়াস হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ। বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের তৎপরতা প্রত্যাশা করে আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস।

নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ সাতটি দেশের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় এক বৈঠকে মহাসচিব গুতেরেস মিয়ানমারে সহিংসতার বিষয়টি তুলে ধরবেন।

তার আগে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নিরাপত্তা পরিষদের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক করবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান।

জাতিসংঘে শেখ হাসিনা

নিরাপত্তা পরিষদের ভিটো ক্ষমতাধর পাঁচ দেশের মধ্যে চীন ও রাশিয়া ইতোমধ্যে রাখাইনের বিষয়টি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে দেখার কথা জানিয়েছে। তবে পরিস্থিতি তুলে ধরার মাধ্যমে তাদের অবস্থান বদলানোর চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরা।

ভিটো ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধে দ্রুত বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার উপর জোর দিচ্ছেন।

জাতিসংঘে সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়ে বিশ্বনেতাদের সক্রিয়তা প্রত্যাশা করে রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবসানে পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।