চীনের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার দূতাবাসে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে চীন থেকে ১৫০ টন জরুরি ত্রাণ সামগ্রী চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাবে।
মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের প্রতি চীনের সহানুভূতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি যত দ্রুত সম্ভব এই বিষয়ের সুরাহা হবে এবং এর অবসানে চীন গঠনমূলক ভূমিকা নিতে আগ্রহী।”
বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন তিনি।
মিয়ানমারের প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীন দেশটির দীর্ঘকালের মিত্র। ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে দুই দেশের মধ্যে।
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর দমন অভিযান নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলেও দেশটিকে সমর্থন জানিয়ে আসছিল চীন। গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমার সরকারকে সমর্থনের কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
তিনি বলেছিলেন, “রাখাইনে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুরক্ষায় মিয়ানমার সরকারের নেওয়া উদ্যোগ চীন বুঝতে পারছে এবং তা সমর্থন করছে। আশা করি আগুন নিয়ে এ খেলা দ্রুতই শেষ হবে।”
মিয়নমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের কথা বিবেচনায় নিয়েই সংকটের অবসানে চীনের শরণ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট তাকেদা আলেমু।
এই প্রেক্ষাপটে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিসহ আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল গত সপ্তাহে বেইজিং গেছেন। তারা দেশটির নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন বলে ওই প্রতিনিধি দলে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন।
দলটির উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট লি জুন রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ আমলে নিয়ে সমস্যার সমাধানে মিয়ানমার যাতে উদ্যোগী হয় সেজন্য বেইজিং চেষ্টা চালাবে বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
চীন বাংলাদেশের ‘অভিন্ন স্বপ্ন’
চীনা দূতাবাসের এই অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী, বিভিন্ন দলের নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ভৌগলিক, ঐতিহাসিক ও সংস্কৃতিগত দিক থেকে চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘকালের।
“৪০ বছরের বেশি সময় আগে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।”
গত তিন দশকে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে চীনের অর্জনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “চীন বাংলাদেশের প্রধান উন্নয়ন অংশীদারদের একটি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা অসামান্য সহযোগিতা করছে।”
রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই উন্নয়নশীল দেশ, যাদের রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা।
“আমাদের অনেক কিছু অভিন্ন, এমনকি চীনা স্বপ্ন ও সোনার বাংলা একই অর্থ বহন করে।”
দুই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের পারস্পরিক আস্থাও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার চীন। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটিও হয়ে উঠছে এশিয়ার প্রভাবশালী দেশটি।
মা মিং চিয়াং বলেন, “রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমার দায়িত্ব পালনকালে চীন বাংলাদেশের এক নম্বর বিনিয়োগকারী হবে বলে আমি আশা করি।”