আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
ইনু বলেন, মিয়ানমারের নেত্রী সু চির বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বক্তব্যে প্রকৃত ঘটনার প্রতিফলন ঘটাননি।
“উনি রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সমস্যাটাকে ধোঁয়াশা করে রেখেছেন। উনার বক্তব্য সামরিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত। সু চির মতো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রীর জাতিগত নিপীড়নকে আড়াল করার ব্যাপারটা লজ্জাজনক।
“তবে এই বক্তব্যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এতদিন যে মিথ্যাচার করে আসছিল সেই মিথ্যাচারকে চাপিয়ে সু চি স্বীকার করেছেন, চার লক্ষাধিক মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। সুতরাং সেই দিক থেকে মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, এই সত্যটা লুকাতে পারেননি। এই জায়গাটা ধরে আমাদের এগোতে হবে।”
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে ২৫ অগাস্ট থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামে। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সেখান থেকে সোয়া চার লাখ মানুষ বাংলাদেশে এসেছে।
রোহিঙ্গাদের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নৃশংসতা এবং তাদের দেশান্তরী হওয়া নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মধ্যে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও ক্ষমতাসীন দল এনএলডির নেত্রী সু চি।
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে শান্তিতে নোবেল জয়ী সু চি বলেন, নব্বইয়ের দশকে করা প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় ‘যাচাইয়ের মাধ্যমে’ বাংলাদেশে থাকা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে তার দেশ প্রস্তুত।
কিন্তু এই শরণার্থীদের ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে স্বীকার করে না নেওয়ায় এবং তাদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিষয়টি ভাষণে এড়িয়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচিত হচ্ছেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী ইনু বলছেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় নয়, জাতিসংঘকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে।
“সমাধানের পথ খুঁজতে হলে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয়ভাবে এই পথে হাঁটা ঠিক নয়। আমাদের হাঁটতে হবে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে। সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন ও যাবতীয় কর্মকাণ্ড জাতিসংঘ, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ এই তিন পক্ষের ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।”
তাৎক্ষণিকভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ তাদের প্রাণ রক্ষা করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এবার অং সান সু চি ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এই রোহিঙ্গাদের প্রত্যেককে ফেরত নিয়ে তাদের নিজ বাসভূমিতে পুনর্বাসন করে শান্তির ব্যবস্থা করে দেবেন।
“রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা তাদের ফেরত দিলাম, আবার তাদের তাড়িয়ে দিল, আবার দিলাম আবার তাড়িয়ে দিল। ১৯৭৮ সালে ও ১৯৯২ সালে এসেছে, ফেরত গেছে।
“সেজন্য এর স্থায়ী সমাধান আমরা এভাবে দেখি যে, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে, তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে, ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, পুনর্বাসন করতে হবে। আর যারা গণহত্যা চালিয়ে অপরাধ সংঘটিত করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই কেবল মিয়ানমার ও আমাদের এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত হবে।”
শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘সামরিক পথ’ বা যুদ্ধ কোনো সঠিক পথ নয় মন্তব্য করে হাসানুল হক ইনু বলেন, “যারা যুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে তারা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জনগণের রক্তপাতের পরামর্শ দিচ্ছে।
“সমাধানের একটি মাত্র পথ আছে সেটা হচ্ছে আলোচনা। সেখানে তিনটি উদ্যোগ আমাদের গ্রহণ করতে হবে- শেখ হাসিনার নেওয়া শান্তির উদ্যোগ, কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং গণমাধ্যমের সঠিক চিত্রায়নের মধ্য দিয়ে বিশেষ ভূমিকা।”
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের সবার প্রত্যাশা, মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের প্রত্যাবর্তন করুক। বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং মিয়ানমার সরকারের সমন্বয়ে সেই দেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও অন্যান্য অধিকার নিশ্চত করবে বলে আমরা আশা করি।”
বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রদূত মমতাজ হোসেন, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এম এ কাশেম ও গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাহাদাত হোসেন বক্তব্য দেন।