মডেল থেকে ‘জঙ্গিনেতা’ বনে যাওয়া মেহেদী রিমান্ডে

র‌্যাম্প মডেল থেকে কীভাবে জঙ্গিবাদে জড়ালেন, কীভাবে হয়ে উঠলেন জেএমবির নেতা, কী ছিল পরিকল্পনা, সেসব জানতে মেহেদী হাসানকে চার দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে র‌্যাব।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2017, 01:12 PM
Updated : 21 Sept 2017, 01:15 PM

বুধবার গভীর রাতে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ২৯ বছর বয়সী এই যুবককে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে নেওয়া হয়।

বনানী থানার সন্ত্রাস দমন আইনের এক মামলায় তাকে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের এএসপি বেলায়েত হোসেন।

বিচারক সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী ৪ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন বলে আদালত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা এসআই ফরিদ মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

তিনি বলেন, মেহেদীর পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। বিচারক তাকে প্রশ্ন করলেও তিনি নিরুত্তর থাকেন।

ঢাকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করা মেহেদীর বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার রাজাপুর গ্রামে। তার বাবা খোরশেদ আলম পুলিশের একজন অবসরপ্রাপ্ত এএসআই।

র‌্যাব বলছে, ছাত্র অবস্থায় মেহেদী নামে র‌্যাম্প মডেলিং করতেন ওই যুবক। লেখাপড়া শেষ করে শুরু করেন ব্যবসা।

জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ দার-ই-কুতনী’র কমান্ডার হয়ে তিনি ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল নামে কাজ চলাচ্ছিলেন বলে দাবি র‌্যাবের।

রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁও থানা এলাকার দক্ষিণ বনশ্রীতে অভিযান চালিয়ে মেহেদীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট ও উগ্রবাদ সংক্রান্ত বই উদ্ধার করা হয় বলে র‌্যাব জানায়।

মেহেদী বনানীর মামলাটি ছাড়াও উত্তরা থানায় এক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতবছর অক্টোবরে র‌্যাবের অভিযানের মধ্যে পালাতে গিয়ে নিহত হন জেএমবির তখনকার আমির সারোয়ার জাহান ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ, যিনি তামিম চৌধুরীর সঙ্গে মিলে জেএমবির নতুন অংশটিকে সংগঠিত করেন। সারোয়ারের বাসায় পাওয়া আলামত থেকে এই সংগঠনের দুটি ‘সামরিক ব্রিগেড’ থাকার তথ্য পাওয়া যায়।

এর মধ্যে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ হলি আর্টিজান বেকারিসহ বিভিন্ন হামলায় সক্রিয় ভূমিকা রাখে। আর তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ গোপনে কর্মী সংগ্রহের পাশাপাশি ‘রিজার্ভ ফোর্স’ হিসেবে ছিল বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ‘বদর স্কোয়াড’ দুর্বল হয়ে গেলে ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ সদস্য সংগ্রহ করে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করে।

র‌্যাব জানায়, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব কর্মকর্তারা জেএমবির এই ব্রিগেডের বিষয়ে নতুন তথ্য পায়। তখনই জানা যায়, ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল নামের এক নেতার নেতৃত্বে ওই ব্রিগেড নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, গুলশানের হলি আর্টিজানে নিহত জঙ্গি নিবরাস ইসলামসহ কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গির সঙ্গে মেহেদীর ‘প্রত্যক্ষ যোগাযোগ’ ছিল। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি সদস্যদের ‘বাইয়্যাত’ (শপথ) দিতেন এবং তার ভিডিও বিভিন্ন উগ্রবাদী চ্যানেলে প্রচার করতেন। সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদাও সংগ্রহ করতেন।